ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নিঃস্ব হয়েও করোনা আক্রান্ত আপনজনকে বাঁচানোর আকুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩০, ১৪ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২২:৪৬, ১৪ জুলাই ২০২১
নিঃস্ব হয়েও করোনা আক্রান্ত আপনজনকে বাঁচানোর আকুতি

মহামারি করোনার এখনও পর্যন্ত কার্যকরী ওষুধ কিংবা সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণ বিবেচনায় অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনানুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যয় ভারও কম নয়। আপনজনের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকে নিঃস্ব হচ্ছেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েও বেঁচে থাকার লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ নিংস্ব হয়েও আশা ছাড়েননি।

উত্তরবঙ্গের মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। যেখানে মোট রোগীর প্রায় ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশ করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের পর থেকে হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীদের অধিকাংশই খারাপ অবস্থায় ভর্তি হচ্ছেন। যাদের প্রায় প্রত্যেকেরই অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ছে। এসব রোগীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ছে। এক্ষেত্রে হাসপাতালের বিভিন্ন সংকট ও সীমাবদ্ধতার কারণে বাইরে থেকে বেশকিছু পরীক্ষাসহ ওষুধও কিনতে হচ্ছে। যেখানে রোগীদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। সর্বোপরি ব্যয়বহুল করোনা আক্রান্ত আপনজনের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্বও হচ্ছেন। এরপরও আপনজনকে বাঁচাতে তাদের চেষ্টার শেষ নেই।

রামেক হাসপাতাল সূত্র বলছে, বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে করোনা উপসর্গ বা পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টসহ রোগীর স্বজনদের। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা পরামর্শ ও অন্যান্য সেবা রোগীদের দিচ্ছেন। কিন্তু রোগীর পরিবারকে চিকিৎসার আর্থিক খরচের বিষয়টি ভাবতে হচ্ছে। কেননা রোগীর শতভাগ চিকিৎসা খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে না।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় একট্রিমা নামক ইনঞ্জেকশনটা সবচেয়ে দামি। তবে এটা সব রোগীকে দেওয়া হয় না। এটা দিলেই যে রোগী ভালো হয়ে যাবে এমনটাও না। তবে কিছুটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আসলে করোনার নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ বা ইনঞ্জেকশন নেই। যেটা দিলে রোগী ভালো হয়ে এটা বলা যায়।

চিকিৎসকরা আরো বলছেন, রামেক হাসপাতালে অর্থের অভাবে চিকিৎসা হয়নি এমন ঘটনা ঘটেনি। রোগীর স্বজনরা যেইভাবেই হোক অর্থ জোগাড় করেছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ বা পরীক্ষা করেছেন। হাসপাতালের আইসিইউতে মাঝে মাঝে এমন রোগী ভর্তি হয় যারা বাইরে থেকে ওষুধ কেনার সামর্থ রাখেন না। ধার দেনা করে আর হয়তো কুলাতে পারছেন না। অর্থের অভাবে রোগীর চিকিৎসা না করিয়ে বাসায় নিয়ে যেতেও চায়। এসব রোগীদের অসহায়ত্বকে বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার খরচ বহন করে। এছাড়াও নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা নিয়েও অনেক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

করোনা আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে গত ২৪ দিন থেকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন মুদি দোকানি আব্দুল মালেক। জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কিশোরপুর এলাকার বাসিন্দা তিনি। তার একমাত্র মেয়ে আইরিনা খাতুন তার দেখাশোনা করছেন।

আইরিনা খাতুন জানান, তার মায়ের প্রায় একসপ্তাহ চিকিৎসা শেষে এখন বাবাকে নিয়ে ভর্তি আছেন। যার অবস্থা খুবই খারাপ। মায়ের চিকিৎসায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। বাবার চিকিৎসা এখনও চলমান। এ পর্যন্ত বাবার চিকিৎসায় প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন তাদের বাড়িভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সহায়তায় তার বাবার চিকিৎসা চলছে। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে চিকিৎসা খরচ বহন করবেন তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। এ ছাড়াও তার বাবার বর্তমান যে শারীরিক অবস্থা তাতে তিনি কতদিন বাঁচবেন এটাও অনিশ্চিত।

কুষ্টিয়া দৌলতপুর থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ৬০ বছর বয়সী আয়েশা বেগম। তার নাতি শাহরিয়ার আলম জানান, তার নানীকে নিয়ে তারা চার দিন থেকে ভর্তি আছেন। এখন অবস্থা কিছুটা ভালো। এখন পর্যন্ত তার চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা মতো খরচ হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে বলা যায় না।

রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, করোনা রোগীর সুচিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতাল থেকে ওষুধসহ পরীক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে কিছু ওষুধ ও পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে রোগীদেরই সেটা ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। তবে কোনো রোগীর স্বজন যদি অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না এমন অপরাগতা সর্ম্পকে জানান, তবে হাসপাতালের পক্ষে যতটুকু সম্ভব করা হচ্ছে।  

তানজিমুল/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়