ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘সবাই শুধু আশ্বাস দেয়, কেউ কথা রাখেনা’

তাহিরপুর (সুুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২০, ১৬ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৭:২৮, ১৬ জুলাই ২০২১
‘সবাই শুধু আশ্বাস দেয়, কেউ কথা রাখেনা’

‘গরিবকে নিয়ে সবাই মজা করে।  সবাই কয় তুমারে একটা ঘর দিমু, তুমার ঘরে সোলার লাইট লাগাইয়া দিমু, ঈদ আইতাছে দেখা কইরো নতুন কাপড় কিনে দিমুনে।  কিন্তু কেউ কিচ্ছু দেয় না, খালি আমারে মিথ্যে আশা দিয়া রাখে।’

বলছিলেন সুুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর (দ.) ইউনিয়নের সুলেমানপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ আহাদ আলী (৭৯)।

আহাদ আলী বলেন, ‘জীবনের প্রথম সময়টা ভালো কাটলেও, শেষ সময়টায় যেন অন্ধকার নেমে এসেছে।  নিজের একসময় জায়গাজমি ছিলো।  অভাবে পরে এগুলাও বিক্রি করতে হলো।  বৃদ্ধ বয়সে অন্যের ছোট্ট একটি ঘরে জীবনযাপন করতেছি।  তাও আবার ঘরে কোনো লাইট নাই।  অন্ধকার ঘরের মধ্যে রাত কাটে।  গ্রামের সবাই সন্ধ্যা হলে দেখি ঘরে লাইট জালায়, তারার ঘর গুলো কত পসর (উজ্জ্বল) হয়।  আর আমার টাকা পয়সা না থাকায় ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নাই, বিদ্যুৎ সংযোগ হইলেই বা মাসের মাস বিল দিবো কিভাবে? স্ত্রী-সন্তান কেউ নাই।  আয় রোজগারও তো করতাম পারি না বৃদ্ধ বয়সে।  মাইনষে যা দেয় তাই খাইয়া কোনোরকম বাঁচি।  যদি কেউ একটা দুই লাইটের সোলার দিতো, তাইলে আমিও সোলারের লাইট আমার ঘরে জ্বালাইতে পারমু।’  

আহাদ আলী বলেন, ‘সামনে ঈদ আইতাছে, সবাই নতুন কাপড় পরবো।  আমার কোনো নতুন কাপড় নাই? ঈদের জামাতে জাইমু কি পইরা? গরিব বলে কী আমার কেনো মূল্যে নাই? আমি কি মানুষ না?’

স্থানীয়রা জানান, আহাদ আলীর কোনো স্ত্রী-সন্তান নেই।  নিজের কোনো জায়গাজমি নেই।  বৃদ্ধ বয়সে একাই একই গ্রামের মতি মিয়ার ছোট্ট একটি ঘরেই বসবাস করছেন আহাদ আলী।  ঘরটি খুবই ছোট্ট।  বসবাসের একদম অনুপযোগী। লাইট নাই, ফ্যান নাই।  ভালো কোনো বিছানাও নাই।  বসার মতো কোনো যায়গা নাই।  

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য ও সুলেমানপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আহাদ আলী আর্থিকভাবে একদম অসচ্ছল।  উনার নিজের সংসার চালানোর মতো কোনো ক্ষমতা নেই। উনাকে সবাই যদি আর্থিক ভাবে অল্প-অল্প করেও সাহায্য করতো তাহলে কিছুটা হলেও উপকার হতো’।

একই কথা বললেন আহাদ আলীর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুলেমানপুর গ্রামের বাসিন্দা বজলুর রশীদও।

আহাদ আলীর ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এই ব্যক্তিকে সাহায্য করার।  উপজেলায় সোলার প্রজেক্ট আসলে আমরা একটি সোলার উনার ঘরে লাগনোর ব্যবস্থা করবো।  উক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।  সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে বলে দিবো উনাকে সাহায্য করার জন্য।’

তানভীর/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়