ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘রাজা’র ভালোবাসার দাম টাকায় মাপতে চান না কাদের

মাগুরা প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ১৬ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৭:২৬, ১৬ জুলাই ২০২১
‘রাজা’র ভালোবাসার দাম টাকায় মাপতে চান না কাদের

দরিদ্র আব্দুল কাদের মোল্যার নিজের জমি নেই। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালিয়ে সংসার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। সংসারে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে আছে; আর আছে এক রাজা- গরিবের রাজা।

দিন শেষে বাড়ি ফিরতেই শুরু হয় রাজার হাঁকডাক। ও ঠিক বুঝে ফেলে কাদের মোল্যার উপস্থিতি। তখন সব ফেলে আগে তার কাছে যেতে হয়। শরীরে হাত বুলিয়ে দেয়ার পর, ভাব-ভালোবাসা আদান-প্রদান শেষে রাজা শান্ত হয়। হাসতে হাসতে কথাগুলো বলছিলেন কাদের মোল্যা।

অনেক আদর, যত্নে তিনি এই ষাঁড় লালন-পালন করেছেন। ভালোবেসে নাম রেখেছেন ‘গরিবের রাজা’। কোরবানি সামনে রেখে সাড়ে ৫ ফিট উঁচু, সাড়ে ৭ ফিট লম্বা রাজা এখন প্রস্তুত। ওজন বিশ মণ। কিন্তু বিক্রির কথা উঠলেই কাদের মোল্যার মন বিষাদে ভরে যাচ্ছে। তিনি রাজার দাম হেঁকেছেন ১২ লাখ টাকা। পছন্দের দাম প্রায় পেয়েও গেছেন। তারপরও আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে চান তিনি। রাজা থাকুক আর ক’টা দিন তার কাছে। রাজাকে বিক্রি করে তার লাভ হবে ঠিকই, কিন্তু রাজার ভালোবাসার দাম টাকায় মাপতে চান না কাদের মোল্যা।

মাগুরা সদর উপজেলার কছুন্দি ইউনিয়নের সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘরে পরিবার নিয়ে বাস করেন কাদের মোল্যা। তিনি জানান, বছর তিনেক আগে স্থানীয় রামনগর হাট থেকে ৩৯ হাজার টাকায় তিনি রাজাকে কিনে আনেন।  ফ্রিজিয়ান জাতের বাছুরটি স্ত্রী শেফালী বেগম এবং দুই ছেলেমেয়ের যত্নে দিনদিন বড় হতে থাকে। এদিকে রাজার পেছনে ব্যয়ের পুরোটাই যোগান দিতে থাকেন কাদের মোল্যা।

রাজা এখন কাদের মোল্যার একমাত্র সম্পদ। তার দাবি রাজা এই এলাকার সবচেয়ে বড় গরু। যে কারণে রাজাকে দেখতে অনেকে ভিড় করছেন। তেমনই এক যুবক দিপু শেখ বলেন, ‘মানুষের মুখে ষাঁড়টির কথা শুনে দেখতে এসেছি। আশ্রায়নের সামান্য এই জায়গায় এমন একটি ষাঁড় লালন-পালন করে কাদের মোল্যা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’

কাদের মোল্যা বলেন, ‘নিজে না খেয়ে রাজাকে খাইয়েছি। কৃত্রিম উপয়ে বড় করি নাই। এখন ভালো দামে বিক্রি করে পরিবারের জন্য এক টুকরো জমি ও মাথা গোজার ঠাঁই করতে চাই।’ 

রাজার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে ভবিষ্যতে আরো গরু লালন-পালন করে বড় একটি খামার দিয়ে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন কাদের মোল্যা। এ প্রসঙ্গে কছুন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম মোল্যা বলেন, ‘কাদের গরুটির পেছনে শুধু অর্থই ঢালেনি, পরিশ্রমও করেছে। তার সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে এলাকার মানুষ।’ 

সবাই যদি কাদেরের মতো একটা হলেও গরু পালন করে তাহলে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা বদলে যাবে বলে মনে করেন এই ইউপি সদস্য।  
 

শাহীন/তারা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়