ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাগেরহাটে সওজের ১৪ বেইলি ব্রিজ এখন মরণফাঁদ 

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ১৭ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৯:৩৭, ১৭ জুলাই ২০২১
বাগেরহাটে সওজের ১৪ বেইলি ব্রিজ এখন মরণফাঁদ 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাগেরহাটের দুটি সড়কের ১৪টি বেইলি ব্রিজ এখন পথচারী ও যানবাহন চালকদের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। 

প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের নির্মিত ব্রিজগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগ ব্রিজের কোথাও কোথাও স্টিলের পাত ভেঙে আলগা হয়ে গেছে। আবার কোথাও মরিচা পড়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 

এসব ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজে প্রতি নিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকাবাসী, পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে। ঝুঁকি এড়াতে ভিন্ন পথে ঘুরে গন্তব‌্যে যেতে পণ‌্য পরিবহন ব্যয় বাড়ছে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের। 

সড়ক বিভাগ বলছে— বেইলি ব্রিজের স্থানে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। 

বাগেরহাট সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মাওয়া পুরাতন মহাসড়ক ও সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৪টি বেইলি ব্রিজ রয়েছে। এসব ব্রিজগুলো প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্রিজের অবস্থা নাজুক। 

এর মধ্যে মোল্লাহাট উপজেলার নাশুখালী বাজার সংলগ্ন ব্রিজ, পাগলার বাজার ব্রিজ, চরকুলিয়া ব্রিজ, হারিদহ ব্রিজ, মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতি বেইলিব্রিজ, শরণখোলা উপজেলার নলবুনিয়া ব্রিজ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। 

এসব ব্রিজের সামনে সড়ক বিভাগ কর্তৃক সতর্ক বার্তা লিখে সাইন বোর্ড দেওয়া হয়েছে। সাইনবোর্ডে সাবধান ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ লেখা থাকার পরেও ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত হালকা বা ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। 

চরকুলিয়া ব্রিজ এলাকার ব্যবসায়ী মো. মাসুদ সরদার ও মিজানুর রহমান বলেন, ‘মোল্লহাট উপজেলার অন্যতম বড় বাজার চরকুলিয়া। এখানে প্রতিদিনই কয়েক হাজার মানুষ বাজার করতে আসে। কিন্তু ব্রিজটি ভাঙা থাকায় অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’

চুরকুলিয়া ব্রিজে দূর্ঘটনায় আহত মো. সোহেল বলেন, ‘ব্রিজের ওপর দিয়ে সাইকেলে করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ব্রিজের একটি পাত ভেঙে যায়। এতে আমার পাসহ সাইকেলের চাকা ব্রিজের মধ্যে ঢুকে যায়। আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। কয়েকদিন আগে স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ভ্যানও এভাবে পড়ে যায়। ওই সময় অন্তত তিনজন ছাত্রী আহত হয়। এভাবে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে চরকুলিয়া বেইলি ব্রিজে।’ 

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাগলার বাজার বেইলি ব্রিজ থেকে নছিমন ভর্তি গাছ বহন করতে দেখা যায় চালক সুন্দর আলীকে। তিনি বলেন, ‘ভাই আমরা তো গাছ ও বিভিন্ন পণ‌্য পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করি। কী করব? এই রাস্তা ছাড়া আমাদের বিকল্প রাস্তাও নেই। তাই নিষেধ থাকলেও নছিমন নিয়ে বেইলি ব্রিজ পার হই।

হারিদহ ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিনই ছোট খাট দুর্ঘটনা ঘটে আমাদের এই ব্রিজে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ অবস্থা দেখতে হয় আমাদের। পথচারীদের চলাচল ও গাড়ি চালকদের সুবিধার জন্য আমরা স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এই ব্রিজটি একবার সংস্কারও করেছি। কিন্তু বেশিদিন টেকেনি, আবারও নষ্ট হয়ে গেছে।’ 

মোল্লাহাট উপজেলার গাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘গাওলা ইউনিয়নের মধ্যে সড়ক জনপথের পুরোনো রাস্তার ওপর চারটি বেইলি সেতু রয়েছে। তার প্রত্যেকটিই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। যেকোনো সময় ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সেতু পুনঃনির্মাণ অথবা সংস্কারের জন্য ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘পুরাতন বেইলি সেতুর স্থানে আরসিসি সেতু তৈরির জন্য একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মন্ত্রলায়ের অনুমোদন শেষে দরপত্র আহ্বান করা হবে। দরপত্র আহ্বান শেষে যত দ্রুত সম্ভব আরসিসি সেতু তৈরির জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হবে। সব মিলিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব বেইলি ব্রিজ সমস্যার সমাধান করা হবে।’

বাগেরহাট/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়