এক হাতেই সংসারের চাকা ঘোরাচ্ছেন অরুন দাশ
শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম
এক হাত দিয়ে সব কাজ করেন অরুন দাশ
অরুন দাশ। বয়স ৪৯। কিন্তু ৩৩ বছর আগেই এক দুর্ঘটনায় হাত হারান তিনি। আঘাত পান পায়ে। তাই বলে থেমে নেই জীবন। এক হাতেই ঘোরাচ্ছেন সংসারের চাকা।
অরুন দাশের বাড়ি পাবনার চাটমোহরের অমৃতকুণ্ডা গ্রামে। তার বাবা মৃত নরেন চন্দ্র।
অরুন দাশ বলেন, ‘১৯৮৮ সালে স্থানীয় রেলবাজারে সওদাগর প্রামাণিকের রাইচ মিলে কাজ করতাম। মোটর লাইনের চলন্ত চাকার শেফের ফিতার সঙ্গে লুঙ্গি জড়িয়ে যায়। এতে ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ডান পায়েও আঘাত লাগে।’
তিনি জানান, দুর্ঘটনার ৬ মাস পর সুস্থ হন। আবার মিলে কাজ শুরু করেন। এক হাতেই কাজ করেন। এভাবে ২/৩ বছর কাজ করার পর মিলটি বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৯৫ সালে তিনি বিয়ে করেন তুলসী রানীকে। তাদের সংসারে আসে একে একে ছয় মেয়ে। এরমধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে। তিন মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পরও তিন মেয়ে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে ছয় জনের সংসার চালান অরুন দাশ।
অরুন দাশ বলেন, ‘বিয়ের এক বছর পর কী করবো ভেবে না পেয়ে এক হাত দিয়েই বাঁশ দিয়ে হাঁস-মুরগির টুপা তৈরি শুরু করি। এগুলো বিভিন্ন হাটে ও গ্রামে বিক্রি করি। দিনে ৫/৭টি টুপা তৈরি করতে পারি। প্রতিটি টুপা বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। এই কাজে মা ও স্ত্রী সহযোগিতা করে।’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শত কষ্টের মাঝেও কারো কাছে কখনও হাত পাতেননি অরুন দাশ। নিজে নিজেই আয় করে সংসার চালান। এর আগে প্রথম মেয়ে জন্মের পর দুই বার ঢাকায় গেছেন গার্মেন্টসে চাকরি করতে। এক হাত নেই বলে চাকরি হয়নি। তখন না খেয়েও দিন কাটাতে হয়েছে। এখন পাটখড়ির বেড়া দিয়ে ভাঙাচোরা ঘরে কোনো রকমে মাথা গুঁজে আছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনি বাঁশের টুপা তৈরি করে সংসার চালান। কিন্তু যখন পুঁজি শেষ হয়ে যায় তখন সংসারে দেখা দেয় টানাটানি। আর এখন করোনার কারণে বেচা-কেনাও বন্ধ।
এমন পরিস্থিতিতে তিনি চাইলেন সরকারি, বেসরকারি সহযোগিতা। তিনি বলেন, ‘অন্যের কাছে হাত পেতে নয়, নিজেই পরিশ্রম করে বাঁচতে চাই। তবে যদি কিছু পুঁজি পেতাম সেক্ষেত্রে সংগ্রামটা সহজ হতো।’
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম বলেন, ‘আমি অরুন দাশকে জানি। অনেক কষ্ট করেন। তার ব্যবসার পুঁজি করে দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যর সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে সহযোগিতা এনে দেওয়া যায় কি না সেই চেষ্টা করবো।’
পাবনা/ইভা
আরো পড়ুন