ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

একটি নদীর জাদুঘর

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ২৫ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৬:৫৬, ২৫ জুলাই ২০২১
একটি নদীর জাদুঘর

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আমাদের দেশে মাকড়শার জালের মতো প্রায় ৩১০টি নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মধ্যযুগে দেশে তেরোশো নদ-নদী থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তন ও দখলের কারণে বহু সংখ্যক হারিয়ে গেছে। জাদুঘরের চার দেয়ালে এখন জায়গা পাচ্ছে বহমান ও ভরাট হওয়া নদীগুলো। 

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে বেসরকারিভাবে নির্মিত ‌‌‘লোকায়ন জীবন বৈচিত্র জাদুঘরে’ ২০১৬ সালে ‘নদী গ্যালারি’ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের উত্তরে বিএডিসি খামার থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে পূর্ব আক্চা গ্রামে এই লোকায়ন জীববৈচিত্র্য জাদুঘর অবস্থিত।

যেসব নদী চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের প্রায় সবকটি নদ-নদীর পানি রয়েছে এই গ্যালারিতে। তাছাড়া, নদীভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য। নদীর উৎপত্তি স্থান, ইতিহাসসহ সব তথ্যই রয়েছে এখানে। রয়েছে নদী কেন্দ্রিক পেশা ও বৃত্তিনির্ভর উপকরণ, দেশের নদ-নদীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও এসংক্রান্ত তথ্য ছাড়াও নৌকা, নৌকা বাইচ, ভাটিয়ালী গান, বন্যা, চর, জলজ উদ্ভিদ, মৎস্য, বর্ষা, পাখি ইত্যাদি নানা তথ্য এ গ্যালারিতে উপস্থাপিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের কয়েকটি দেশের নদী ও সাগরের পানি সংরক্ষিত রয়েছে নদী গ্যালারিতে। সম্প্রতি হারিয়ে যাওয়া অনেক নদীর পানিও রয়ে গেছে এই সংরক্ষণে।

গ্যালারিতে সংরক্ষিত নাম পড়তে গেলে বেশকিছু নদীকে নতুন বা অপরিচিত বলে মনে হয়। এই নাম না জানা কয়েকটি নদী হচ্ছে-- ফুলকুমার, কালো, সুগন্ধা, সোনাভরী, পুনর্ভরা, চাওয়াই, দুধকুমর, নীলকমল, ধরনী, হলহলিয়া, কালজানি, জালশিরা, আখিরা, ঘাঘট, লেংগা, মরাসতি, সাতপোয়া, দশআনি, জারখালী, বহুলী, হুড়া সাগর, সন্ধ্যা, হালতি, ধলাই, ঢেপা, ছাতনাই, তালমা, ভেরগাঁ, জিঞ্জিরাম, হাইল হাওর, মর্মর সাগর, নীল সাগর, শিববাড়িয়া, সুখ সাগর, রাঙামাটি, আন্ধারমানিক, রনচন্ডী ইত্যাদি।

দেশের বাইরের সংরিক্ষত পানির মধ্যে রয়েছে লন্ডনের টেমস নদী, জার্মানির দানইয়ুব, আন্দামান সাগর, আরব সাগর ও উত্তর সাগরের পানি। এছাড়া রয়েছে ‘সাত সাগর’ তথা আর্কটিক, উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত সাগর ও দক্ষিণ মহাসাগরের বালি। 

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘লোকায়ন জীবন বৈচিত্র’ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমাদের লোকায়ন জীবনের হারিয়ে যাওয়া ও অজানা বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করতে গিয়েই এই নদী গ্যালারির সৃষ্টি। নদ-নদী প্রকৃতি প্রদত্ত অনেক বড় সম্পদ। কালের স্রোতে নদীর স্রোতও থেমে যাচ্ছে। যে সব নদী হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর পানি ও ইতিহাস থেকে যাচ্ছে এই নদী গ্যালারিতে।  

নদী গ্যালারি ছাড়াও এই লোকায়ন জাদুঘরে রয়েছে তৃণমূল লোকজ গ্যালারি, সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গ্যালারি এবং মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিসহ প্রায় ৭০ রকমের ফল এবং ১২০ রকমের ঔষধি গাছ।

ঠাকুরগাঁও/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়