ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বক্স গার্ডারে সেলিনার সংসার

রেজাউল করিম, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০২, ২৮ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২১:২৬, ২৮ জুলাই ২০২১
বক্স গার্ডারে সেলিনার সংসার

ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন সেলিনা খাতুন (৩৫)। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে ভালোই ছিলেন কাটছিল তার। কিন্তু করোনার ভয়াল আঘাত এলোমেলো করে দিয়েছে তার পরিবার-জীবন। চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। সন্তান-সংসারের খরচ বইতে না পেরে আশ্রয় হয়েছে রাস্তায়।

ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় দেখা হয় তাদের সঙ্গে। চলমান বিআরটিএ প্রকল্পের বক্স গার্ডারের মধ্যে পেতেছেন অস্থায়ী সংসার।

কয়েকটি ছেঁড়া কাঁথা, একটি শীতলপাটি, যৎসামান্য রান্নার উপকরণ ও তিন সন্তান জান্নাতুল, সোয়াদ এবং সাদিয়াকে নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ‌্যে ঘর পেতেছেন সেলিনা খাতুন। 

পরিচয় জানতে চাইলে অদ্ভুত এক টুকরো হাসি খেলে যায় সেলিনা খাতুনের মুখে। বলেন, ‘আমাদের জীবন এমনই, কোনো অভিযোগ বা অভিমান নেই। নিয়তি আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। আগে চাকরি করতাম, এখন কাজ নেই। থাকার যায়গাও নেই। ভাগ্যের নির্মমতায় আজ সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে।’

কাজ হারিয়েছেন। থাকার যায়গাও নেই। বক্স গার্ডার আজ আছে কাল নেই। স্বামী থেকেও নেই। এ অবস্থায় ছোটছোট বাচ্চাদের নিয়ে কীভাবে সংসার চলে তার? 

সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেলিনা বলেন, ‘আল্লাহ একভাবে চালিয়ে নেয়। তবে ভিক্ষা করি না।’

চমৎকার বাচনভঙ্গি সেলিনার। কথা শুনলে মনেই হয় না তিনি রাস্তার মানুষ। মনে হয় ভালো ঘরের মেয়ে। হয়তো ভগ্যের ফেরে পড়ে আজ তার এই অবস্থা।

তিনি জানান, তার মায়ের বাড়ি ঢাকায়, নানার বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। স্বামীর বাড়ি জামালপুর। স্বামী-স্ত্রী দুজনে একসঙ্গে চাকরি করতেন। হঠাৎ তার স্বামী নেশার জগৎ বেছে নেয়। তারপর থেকে সন্তানদের নিয়ে পথে পথেই থাকছেন। এর বেশি ব্যক্তিগত কথা বলতে রাজি হননি সেলিনা। 

চান্দনা চৌরাস্তার বক্স গার্ডারে তার সংসারের মেয়াদ ২৫ দিন পূর্ণ হয়েছে। এখানেই সন্তানদের সঙ্গে কেটেছে তার ঈদ। এর আগে মাসখানেক থেকেছেন টঙ্গীতে। তারও আগে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায়। এসব কথার আড়ালে তার চমৎকার বাচনভঙ্গি আর হাসির মধ্যে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে বলে মনে হয়েছে। প্রতিটি কথায় মিলেছে আত্মবিশ্বাসের রেশ।

কথা বলাতে বলতে হঠাৎ বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বলে ওঠে, ‘মা বেলা তো চলে গেল, ভাত দিবা কখন?’ মেয়ের কথা শুনে সেলিনা বলে ওঠেন, ‘তুমি সোয়াদ আর সাদিয়ার সাথে কথা বলো। আমি শাকপাতা কিনে আনি।’ 

এ কথা বলে আর দেরি করেননি। সন্তানদের রেখে বাজারের দিকে চলে গেলেন সেলিনা খাতুন। সন্তান তিনটি বক্সের মধ্যে বসে মায়ের চলার পথে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো। 

এই শিশুগুলো হয়তো জানে না তাদের ভবিষ্যত কেমন হবে। আগামীকাল খাবার খেতে পারবে কি না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। শুধু জানে তাদের মা আছে। তাদের জন‌্য প্রার্থনা- প্রাণবন্ত শিশু তিনটির উচ্ছ্বল ঝর্ণার মতো হাসিটুকু যেন কান্নায় ঢাকা পড়ে না যায়!

/সনি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়