ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

লালমাই পাহাড়ের বুকে বিরল ও দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদের মেলা

আবদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ০৯:৫৬, ২৯ জুলাই ২০২১
লালমাই পাহাড়ের বুকে বিরল ও দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদের মেলা

উঁচু-নিচু লালমাই পাহাড়ের মাথায় ইট বিছানো পথ। পথের দুই পাশে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মেলা। তবে পাহাড়ের চুড়ায় ইট বিছানো পথের দুই পাশে সবুজের মেলা বললেও ভুল হবে না।

কুমিল্লার পর্যটন নগরী খ্যাত কোটবাড়ি এলাকার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে গেলে এমন নান্দনিক দৃশ্যই এখন চখে পড়বে ভ্রমণপিপাসুদের।

এই উদ্ভিদ উদ্যানের ইটের রাস্তায় সবুজের মাঝে হাঁটলে শরীরের সব ক্লান্তি যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। আর পাখির কিচিরমিচির শব্দতো রয়েছেই। সবুজ প্রকৃতি আর পাখির শব্দ শুনে বাড়ি ফিরতে মন চাইবে না যে কারোরই। এই উদ্যোনের ৯০ ভাগ উদ্ভিদই বিরল এবং বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির বলে জানা গেছে।

কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এমন বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ। কোটবাড়ি এলাকার ময়নামতি জাদুঘরের কাছে সালমানপুরে প্রায় ১৭ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে উদ্যানটি। এখানে রয়েছে কয়েকশ প্রজাতির উদ্ভিদ। যার অন্তত ৯০ শতাংশ বিপন্ন ও দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির উদ্ভিদ। ভবিষ্যতে এ উদ্যানটির বিস্তৃতি আরও বাড়ানো হবে।

ঢাকার মিরপুর ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পর লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি দেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। ২০১৫ সালে এটির কাজ শুরু হয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে শেষ হয়। এ উদ্যানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ, বন্য  প্রাণীর নির্ভয় আবাসস্থল তৈরি, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা। এছাড়া বিনোদনের ব্যবস্থা ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ সুষ্টি করা।

সরেজমিনে উদ্যানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের চুড়ায় ইট বিছানো পথের দুই পাশে মন কেড়ে নেওয়ার মতো নানা উদ্ভিদের মেলা। ইটের রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই একটু পরপরই দেখা মিলে, উদ্ভিদের পরিচিতি বোর্ডের। সেখানে রয়েছে উদ্ভিদের বিস্তারিত বর্ণনা। এখানে আছে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ঝাড়ও। বর্তমানে উদ্যানটিতে বিলুপ্তপ্রায় বিরল উদ্ভিদ রাধাচূড়া, নাগেশ্বর, আগার, নাগলিঙ্গম, কাঞ্চন, অশ্বথ, চন্দন, রক্তচন্দন, চালমুগরা, লোহাকাঠ, চাপালিশ, ধূপ, বাবলা, হরিতকি, বহেরা, হিজল, কনক, তমাল, অশোক, সিভিট, উড়ি আম, বন পেয়ারা, অর্জুন, মহুয়া, তেলশুর, পুঁটিজাম, বাঁশপাতা, কুম্ভি, পিতরাজ, পারুল, জারুল, চম্পা, টগর, বেলি, চিকরাশি, হরিয়ান, লটকন, ফেন্স, বোটলব্রাশ, বাসক, রঙ্গন, করমচা, সোনালু, বট ও কৃষ্ণচূড়ার সমাহার রয়েছে।  

এছাড়া এই উদ্ভিদ উদ্যানে আরও রয়েছে ক্যাকটাস হাউস, অর্কিড হাউস, বিভিন্ন ফুলের বাগান, বিরল উদ্ভিদ বাগান, বন্যপ্রাণীর জন্য জলাশয়, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস। এখানে দর্শনার্থীদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু আরসিসি বেঞ্চ, ব্যাঙের ছাতা সদৃশ্য বিশ্রামাগার। নির্মাণ করা হয়েছে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক শৌচাগারও।

উদ্যানের বন প্রহরী হারুন অর রশিদ বলেন, বন বিভাগ থেকে উদ্যানে প্রবেশ করতে টিকেটের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট ৫ টাকা, আর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। এছাড়া বিদেশিদের জন্য ৪০০ টাকা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ উদ্যান। তবে দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এখন বন্ধ রয়েছে উদ্যানটি।

কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাজী মো.নুরুল করিম বলেন, মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে উদ্যানটির আয়তন আরও বাড়ানোর জন্য আমরা অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। ময়নামতি জাদুঘরের মতো এখানে ফরেস্ট মিউজিয়াম করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আবেদনে। বন বিভাগ পরিপাটি করে গড়ে তুলেছে এই উদ্ভিদ উদ্যানটিকে। এ উদ্যান নতুন প্রজন্মকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত বছরের ৭ নভেম্বর দর্শনার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় বিরল উদ্ভিদের এই উদ্যানটি। উদ্বোধনকালে বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো.আমীর হোসেন চৌধুরী জানান- এখানে দেশের প্রথম ফরেস্ট মিউজিয়াম গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বন বিভাগের। এটিকে জাতীয় মানের একটি উদ্যান হিসেবে গড়ে তুলতে মন্ত্রণালয় একটি মাস্টারপ্লান প্রণয়ন করেছে।

কুমিল্লা/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়