ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

কুমিল্লায় সড়কে শ্রমিকদের ‘মহাদুর্ভোগ’, তবুও ঢাকামুখী ঢল

আবদুর রহমান, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ৩১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৬:৫০, ৩১ জুলাই ২০২১
কুমিল্লায় সড়কে শ্রমিকদের ‘মহাদুর্ভোগ’, তবুও ঢাকামুখী ঢল

ফেনী সদরের বাসিন্দা প্রমি আক্তার ও কুলসুম আক্তার কাজ করেন নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানায়। কারখানা বন্ধ ঘোষণা হওয়ায় ঈদের আগে বাড়িতে আসেন তারা। ভেবেছিলেন চলমান কঠোর লকডাউন শেষে কারখানা খুললে কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ ঘোষণা এসেছে, রোববার (১ আগস্ট) থেকে রপ্তানিমুখী সকল শিল্পকারখানা খোলার। তাই বাধ্য হয়ে কাজে যোগ দিতে শনিবার (৩১ জুলাই) সকালে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন তারা। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানো দূরের কথা, ফেনী থেকে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার (বিশ্বরোড) পর্যন্ত আসতেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এই দুই নারীকে।

পোশাক শ্রমিক প্রমি আক্তার ও কুলসুম আক্তার বলেন, মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিতে তাদের খরচ হয়েছে ১৩০০ টাকা। অথচ অন্য সময় এই পথের ভাড়া জনপ্রতি ৬০ থেকে ১০০ টাকা। যানবাহন চালু না করে হঠাৎ কারখানা চালু করায় এই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের। সকালে বের হয়ে দুপুর পর্যন্ত সময়ে ভেঙে ভেঙে কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে এসেছেন। এখন চিন্তায় আছেন, কীভাবে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছাবেন। এখন থেকে মাইক্রোবাসে যেতে হলে জনপ্রতি ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা করে চাইছেন।

শুধু প্রমি আর কুলসুমই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে এমন ‘মহাদুর্ভোগে’ পড়েছেন রপ্তানিমুখী বিভিন্ন শিল্পকারখানা কয়েক হাজার শ্রমিক। গত ২৩ জুলাই থেকে দেশে চলছে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন। এরই মধ্যে শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় হঠাৎ ১ আগস্ট থেকে শিল্পকারখানা খোলার ঘোষণা আসে। ঘোষণা শোনার পরই গ্রাম থেকে ফেরা শুরু করেছেন শিল্পকারখানার শ্রমিকরা। তবে লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় এসব শ্রমিকরা পড়েন বিপাকে। বাধ্য হয়ে তাদের পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্স ও সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।

শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের চৌদ্দগ্রাম, সুয়াগাজী, পদুয়ার বাজার, আলেখারচর, নিমসার, চান্দিনা, ইলিয়টগঞ্জ, গৌরিপুর এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুশ্চি গ্রামের বাসিন্দা ইউনুস মিয়া কাজ করেন সাভারের শিল্পকারখানায়। তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে পদুয়ার বাজার এসেছি তিনবার ভেঙে, খরচ হয়েছে ৩০০ টাকা। এখন মোটরসাইকেলে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যেতে ১৫০০ টাকা চাইছেন চালক। আমি ১০০০ টাকা বলেছি, কিন্তু তিনি যাবেন না। অথচ কুমিল্লা থেকে ঢাকার ভাড়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। এই লকডাউনে হঠাৎ শিল্পকারখানা চালু করে আমাদের সাজা দেওয়া হয়েছে। গাড়ি বন্ধ আর হঠাৎ কারখানা খোলা, এটা কেমন বিচার?’

মোটরসাইকেল চালক মোহাম্মদ রানা বলেন, ‘হঠাৎ শিল্পকারখানা চালু হওয়ায় মহাসড়কে শ্রমিকদের ঢল নেমেছে। শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আমরা ১৫০০ টাকা করে যাত্রী পার করছি। কারণ ঢাকায় পৌঁছাতে অনেক স্থানে দুর্ভোগে পড়তে হয়।’

শনিবার (৩১ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে মহাসড়কের চান্দিনা এলাকায় কথা চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বাসিন্দা আয়েশা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এভাবে শিল্পকারখানা চালু হওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই। ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। ভেঙে ভেঙে এই পর্যন্ত এসেছি। আমি রাজধানীর মহাখালী একটি শিল্পকারখানায় কাজ করি। এখন চিন্তায় আছি কীভাবে সেখানে ঢাকায় যাবো।’

মহাসড়কে শিল্পকারখানার শ্রমিকদের ঢল নামার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকরাও। তারা যাত্রীদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ ভাড়া আদায় করছেন। প্রতিটি মাইক্রোবাসে ১৪/১৫ জন করে যাত্রী ঢাকায় নিতে দেখা গেছে। এসব যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা এলাকার মাইক্রোবাস চালক আবুল কালাম বলেন, ‘পদুয়ার বাজার থেকে আমার গাড়িতে ১৩ জন নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। জনপ্রতি ভাড়া ১০০০ টাকা করে। কারণ পথে পথে আমাদের বিভিন্ন স্থানে টাকা দিতে হয়। এছাড়াও আসার সময় খালি আসতে হবে। এরই মধ্যে পদুয়ার বাজারে সার্জেন্ট ৬০০০ টাকার মামলা দিয়েছে। আমরাও সুখে নেই।’

পদুয়ার বাজার এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে জেলা পুলিশের সার্জেন্ট রাহাত হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কে শিল্পকারখানার শ্রমিকদের ভিড়। তারা যেভাবে পারছেন, ঢাকার দিকে ছুঁটছেন। তবে আমাদের কাছে শিল্পকারখানার শ্রমিকদের যাওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই বিধিনিষেধ অমান্য করে যেসব যানবাহন রাস্তায় নামছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আগের মতোই ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের চোখে অনিয়ম দেখলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়