ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চাঁই তৈরি করে চলছে সংসার 

নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০০, ৩১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২০:০৫, ৩১ জুলাই ২০২১
চাঁই তৈরি করে চলছে সংসার 

এখন বর্ষাকাল। নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে থইথই করছে। ‘চাঁই’ পানিতে মাছ শিকারের বিশেষ ফাঁদ হিসেবে গ্রামীণ সমাজে পরিচিত। ফলে বর্ষা এলেই বেড়ে যায় চাঁইয়ের চাহিদা। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকার অনেক পরিবার চাঁই তৈরি করে উপার্জন করছেন।

বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই জেলার রায়পুরা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিরপুর, বাশঁগাড়ি, চরমধুয়া ও মির্জাচর গ্রামের শতাধিক বাড়িতে হচ্ছে চাঁই তৈরির কাজ। পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই এ কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। 

বর্ষা মৌসুমে যখন গ্রামাঞ্চলের নিচু জমিতে পানি আসতে শুরু করে তখন ছোট-বড় মাছও সেই পানিতে ভেসে আসে। স্থানীয় জেলেদের পাশাপাশি সৌখিন মাছ শিকারীরাও এ সময় মাছ ধরতে চাঁই ব্যবহার করেন। চাঁই সাধারণত ডুবে যাওয়া জমিতে পেতে রাখা হয়। মাছ চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এভাবেই চিংড়ি, শোল, শিং, কই, খইলসা, পুঁটিসহ দেশিয় মাছ ধরা হয়। 

চাঁই তৈরি করেন এমন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাঁই তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ ও নাইলনের সুতা। বাজার থেকে বাঁশ কিনে নির্দিষ্ট আকারে কেটে ৩ থেকে ৭ দিন পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। সেই বাঁশ কেটে চিকন শলাকা তৈরি করে সুতায় বেঁধে তৈরি হয় চাঁই। একটি বাঁশ দিয়ে সাধারণত ছোট মাছ শিকারের ৪টি চাঁই তৈরি করা যায়। 

চাঁই বিক্রির জন্য এলাকায় সাপ্তাহিক হাট বসে। হাট থেকে যেমন খুচরা ক্রেতারা চাঁই কেনেন, তেমনি পাইকাররাও কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির করেন। উপজেলার শ্রীরামপুর বাজার, আলগীবাজার, বাঁশগাড়ি বাজার ও মনিপুরা বাজারে চাঁই বিক্রির আলাদা স্থান রয়েছে। 

চাঁই তৈরির কারিগর পিরপুর গ্রামের ফারুক মিয়া জানান, মুলি ও মোড়ল দুই ধরনের বাঁশ দিয়েই চাঁই তৈরি করা হয়। মূলত এ শিল্পের বেশির ভাগ কারিগর নারী। তবে তাদের চাঁই বিক্রির জন্য ভাবতে হয় না। পাইকাররা বাড়িতে এসে বায়না দিয়ে যায়। 

একই গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগর মনির, সুমন মিয়া, সাদ্দাম মিয়া জানান, গ্রামের ১২টি পরিবারের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন চাঁই। বাপ-দাদার শেখানো কাজ করেই তারা সংসার চালাচ্ছেন। অনেকে দৈনিক মজুরিতেও কাজ করেন। প্রতিটি চাঁই তৈরির জন্য তারা মজুরি পান ৩০ থেকে ৫০ টাকা। দিনে ১০টি চাঁই তৈরি করা যায়। 
চাঁই-এর পাইকারি ক্রেতা জয়নাল মিয়া বলেন, কারিগররা চাঁই তৈরি করে ফোন দেয়। আমরা এসে নিয়ে যাই। চরাঞ্চলের মানুষের কাছে চাঁই আগে যেমন জনপ্রিয় ছিল, এখনও রয়েছে। ফলে বিক্রিও বেশ ভালো বলে জানান তিনি।
 

এইচ মাহমুদ/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়