ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জাল বুনেই চাল কেনেন বিভাস

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ৪ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১১:২৫, ৪ আগস্ট ২০২১
জাল বুনেই চাল কেনেন বিভাস

সকাল থেকে সন্ধ্যা আপন মনে জাল বোনেন পঞ্চাশোর্ধ্ব বিভাস। অত্যন্ত নিখুঁত বুননে স্বপ্ন তৈরি হয় জীবনে বেঁচে থাকার। হাতে বোনা জালের যথেষ্ট চাহিদা থাকায় এই মৌসুমে কাজের চাপ তুলনামূলক একটু বেশি। পূর্বপুরুষ থেকে চলে আসা এ কাজের সর্বশেষ ধারক ও বাহক আজকের বিভাস চন্দ্র দাস।

স্কুলের গণ্ডি পার হননি তিনি। অভাবের সংসারে বাবার হাতকে শক্ত করার জন্য অল্প বয়সেই শিখেছেন মাছ ধরার কাজ। তবে সেটাও শুধু বর্ষা মৌসুমে। বাকি সময় শিখছেন জাল বুননের শৈল্পিক কৌশল।

গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিল বেলাই থেকে শুরু করে ছোট-বড় অনেক জলাশয় রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এগুলো পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। নতুন পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশি মাছ আসে। আর তাতে স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার মহোৎসব শুরু হয়ে যায়। তবে বর্ষা শেষে শুধু সৌখিন মাছ শিকারীদের বড় মাছ ধরার জন্য রিং জাল অতি প্রয়োজনীয় একটি সরঞ্জাম। আর এজন্য জালটির ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে এ অঞ্চলে।

সাধারণত ছিপ দিয়ে মাছ ধরার সময় বড় মাছ পানি থেকে উপরে তোলার কাজে ব্যবহার হয় এই রিং জাল। রিং সহজলভ্য হলেও হাতে বোনা জালের অভাব রয়েছে। কারণ উপজেলায় এই জাল সহজলভ্য নয়। তবে হাতে এই জালটি যে ক’জন বুনন করেন, বিভাস তাদের মধ্যে একজন।

কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের টেংরাডি এলাকায় বাস করেন বিভাস। তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দু’টি ঘরেই একটি করে ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তান তার কাছে না থাকলেও দ্বিতীয় ছেলেটি তার কাছেই বড় হচ্ছে।

বিভাস বলেন, রিং জাল বোনার কাজ সারা বছর থাকে না। বর্ষা মৌসুম আসলে এই জালের চাহিদা বেড়ে যায়। জাল বুননে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন পড়ে, সময়ও লাগে প্রচুর। দিনে দুইটা জাল বুনতেই কষ্ট হয়ে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে তাই তাদের ফিরিয়ে দিতেও পারি না। বয়স হয়ে যাওয়ায় আগের মতো ধৈর্যও নেই। যেহেতু এটা আমার পেশা, তাই না করেও উপায় নেই। জাল বোনার পাশাপাশি বেল জালে মাছ ধরি। বর্ষার নতুন পানিতে মাছ ভালোই ধরা পড়ে। কিন্তু এখন চারদিকে বাধ হয়ে যাওয়ায় আগের মতো আর মাছ পাই না। তাই বাধ্য হয়ে জাল বুননের দিকেই নজর দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিন যা মাছ পাই, তা স্থানীয় বক্তারপুর বাজারে বিক্রি করে ছেলে সন্তান নিয়ে কোনো রকম চলি। বর্ষার মৌসুম ছাড়া এই রিং জালই ভরসা। জাল তৈরি না করলে চুলায় চাল ওঠে না। জাল বুনে তা মানুষের কাছে বিক্রি করি এবং তা দিয়ে বাড়িতে চাল কিনে নিয়ে যাই।

নিজের সন্তানদের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিভাস চন্দ্র বলেন, আমি কষ্ট করে বড় হয়েছি। পড়ালেখা শিখিনি আর তাই এখন বুঝি পড়ালেখার গুরুত্ব। আমি নিজে এই কাজ করলেও আমি চাই না আমার সন্তান এই পেশায় আসুক। সে পড়ালেখা শিখে অনেক বড় চাকরি করবে, এটাই আমার আশা।

একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব হাফিজ উদ্দিন জানান, বিভাস ছোটবেলা থেকেই তার বাবার সাথে থেকে মাছ ধরার কাজ করত। খুবই পরিশ্রমী হওয়ায় অল্প দিনের মধ্যে সে সব কাজ শিখে ফেলে। এছাড়াও মাছ ধরার অবসরে সে সুতা দিয়ে যে জাল বুনে, তা সবাই পারে না। আগে একটা সময় জাল বুননের কারিগর অনেক ছিল। এখন প্রায় নেই বললেই চলে। হয়তো এজন্যই তার জালের চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে অভাব-অনটনের সংসার এখন এই জাল বোনার পর তা বিক্রির অর্থেই চলে।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়