ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সরকারি খাল দখল করে প্লট বাণিজ্যের অভিযোগ, জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৭, ৪ আগস্ট ২০২১  
সরকারি খাল দখল করে প্লট বাণিজ্যের অভিযোগ, জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় সরকারি মালিকানাধীন খালের জমি বিক্রি প্লট করে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় এক পৌর কাউন্সিলর খালের মধ্যে সীমানা পিলার স্থাপন করে জমির দখল বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

শহরের ২টি ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পৌর খালটির বড় একটি অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় খালের দুই পাড়ে বসবাসকারী অন্তত এক হাজার পরিবার জলাবদ্ধতার শিকার হবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

খালের জমি বিক্রি ও দখলে সহযোগিতার জন্য মাগুরা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশুতোষ সাহার বিরুদ্ধে মাগুরার জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়রের কাছে এক লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। 

লিখিত অভিযোগে এলাকাবাসী জানান, শহরের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কলেজপাড়া, দরি মাগুরা, সাহা পাড়া, নতুন বাজারসহ বিস্তীর্ণ এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন‌্য একমাত্র ব্যবস্থা বড়দোয়া (বড় জলাশয়) থেকে বের হওয়া দাসের ঘাট এর পাশে একটি পৌর কালভার্ট আছে। খালটি শত বছর ধরে প্রবাহমান। এটি প্রায় ২০ ফুট চওড়া। খালের পাশ দিয়ে পায়ে হাঁটার রাস্তাও রয়েছে। জমির সরকারি মানচিত্রে খালটির অবস্থান রয়েছে।

এই খাল দিয়ে শহরের একটি বড় এলাকার পানি নিষ্কাশন হয়ে নবগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়ে। খালটি বন্ধ হয়ে গেলে বা সংকুচিত হয়ে গেলে শহরের পানি ব্যবস্থাপনা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এতে ব্যাপক জলাবদ্ধতায় এ অঞ্চলের পৌরবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছাবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খাল পাড়ে ওই এলাকার অমূল্য সাহার বড় ছেলে প্রশাস্ত কুমার সাহার ৩ একর ৮৬ শতকের একটি জমি প্লট আকারে বিক্রির জন‌্য মধ্যস্বত্বভোগীর দায়িত্ব নেন পৌর কাউন্সিরর আসুতোষ সাহা।

পৌর কাউন্সিলর আশুতোষ সাহা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, ব্যক্তি মালিকানার জমি ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হযেছে। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সঠিক নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী তিন এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় কাউন্সিলর আশুতোষ সাহা জমির মালিকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা কমিশনের বিনিময়ে খালের জমিসহ বিক্রি ও দখল করে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন।ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সঙ্গে সরকারি খালের জমির অন্তত ৫ ফিট ভেতরে গিয়ে খুঁটি গেড়ে ক্রেতাদের প্লটের জমি বুঝিয়ে দেন। এরইমধ্যে জমির ক্রেতারা সীমানা অনুযায়ী জমিতে প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেছেন। এতে খালটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, এই খালটি বাঁচানোর চেয়ে ভূমি ব্যবসায়ী কাউন্সিলর আর্থিক লাভের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন হতে না পারলে শহরের বিস্তির্ণ এলাকায় স্থায়ী জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক জনদুর্ভোগ তৈরি হবে। তারা এ খাল দখলের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। 
দুজন জমির ক্রেতা গোবিন্দ চন্দ্র সাহা ও সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘জমি কেনা বেচার কথা হওয়ার সময় মালিক আমাদের উঁচু স্থান দেখিয়েছিলেন। জমি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার পর আমাকেসহ বেশ কয়েকজনকে খালের ভেতরে জমি বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আমরা নিরীহ মানুষ। আমরা ব্যক্তির জমি কিনেছি অথচ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারি খালের জমি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি এ.টি.এম আনিসুর রহমান জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক নদী বা খালের প্রবহমান জলাধার একটি জীবন্ত সত্ত্বা। কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী ব্যক্তি প্রয়োজনে এ জলাধারকে বন্ধ কিংবা বাধাগ্রস্থ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে মাগুরা শহরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দাসেদের ঘাটের এ খালটি দখলমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

মাগুরা জেলা জজ আদালতের সিভিল আইনের আইনজীবী অ‌্যাড. রিংকু গুহ জানান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩ এর ২৯ নং আইন এর তৃতীয় অধ্যায়ের (ড) অনুচ্ছেদ মোতাবেক- দেশের খাল, জলাশয় ও সমাদ্র উপকুল দখল ও দূষণমুক্ত রাখিবার বিষয়ে সরকারকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সুপারিশ করবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে জনস্বার্থে এ খালটি রক্ষা ও দখল রোধে স্থানীয় প্রশাসন সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। 
জমির মালিক প্রশান্ত সাহা জানান, খালের মধ্যে তার প্রায় ৮ হাত জায়গা রয়েছে। আমি বেশির ভাগ জায়গাই ছাড় দিয়ে জমি বিক্রি করছেন বলে তিনি দাবি করেন।

মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইয়াসিন কবির জানান, খাল দখল করে নির্মাণ কাজ বা খালের পানি নিষ্কাশনের বাধা দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাগুরার পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল জানান, সরকারি মালিকানাধীন খালের জমিতে কেউ স্থাপনা নির্মাণ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম জানান, একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

শাহীন/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়