ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘অবুঝ শিশুর কান্না সইতে পারি না, কেউ একটু খাবার দেন’

শামীম কাদির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ৪ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৩:৪৬, ৪ আগস্ট ২০২১
‘অবুঝ শিশুর কান্না সইতে পারি না, কেউ একটু খাবার দেন’

দুই সন্তান নিয়ে মা সাবিনা বেগম

‘এক মাস হয় আমার কোল জুড়ে এসেছে ফুটফুটে এই মেয়ে শিশু। আদর করে নাম রেখেছি মরিয়ম। কিন্তু কোলের এই বাচ্চাকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না। খাবারের জন‌্য সারাক্ষণ বাচ্চাটা কান্নাকাটি করে। ওকে যে দুধ কিনে খাওয়াবো সেই টাকাও নাই। আমার নিজেরও খাওয়া নাই। আমি না খেতে পেলে ও খাবার পাবে কিভাবে? মা হয়ে ওর কান্না সহ‌্য হয় না। কেউ আমার বাচ্চাটাকে একটু দুধ কিনে দেন, বাচ্চাটাকে বাঁচান।’

বাচ্চার মুখে খাবার না দিতে পেরে অসহায়ের মতো কথাগুলো বলছিলেন আর কাঁদছিলেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের গুয়াবাড়ী ঘাট খামারি পাড়া গ্রামের সাবিনা বেগম। সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর অভাবের তাড়নায় দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় চলে আসেন বাবার বাড়িতে। সেই থেকে তিনি এখন তার রিকশাচলক বাবার বাড়িতে বাড়তি বোঝা।

সাবিনার বাবা আফতাব শেখ বলেন, ‘আমার চার সন্তানের মধ্যে সাবিনা তৃতীয়। তিন বছর আগে অনেক কষ্ট করে মানুষের কাছে ধার দেনা করে বগুড়ার শিবগঞ্জের দেবীপুর গ্রামের ট্রাকচালকের সহকারী নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম তাকে।  বিয়ের পরই তার কোল আলো করে আসে এক মেয়ে। বিয়ের আড়াই বছর পর জামাই ভারসাম‌্যহীন হয়ে পরলে সাবিনা চলে আসে আমার বাড়িতে। আমি ২৭ বছর রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। করোনার মধ্যে কাজকর্ম নেই। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে আমাদের। তাই মেয়ের কোলের শিশুর দুধের টাকা জোগাড় করতে পারি না। পারি না মেয়েটাকে ভালো কিছু খাওয়াতে। আমাদের সাহায‌্য করা মতো কেউ নাই। কোনো হৃদয়বান ব‌্যক্তি বা সরকার থেকে কেউ যদি আমাদের সাহায‌্য করতো, তাহলে খুব ভালো হতো।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে অসহায় সাবিনা বেগম বলেন, ‘বিয়ের পর ভালোভাবেই আমার সংসার চলছিলো। হঠাৎ করে দুর্ঘটনায় আমার স্বামী মানসিক ভারসম‌্যহীন হয়ে পরলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। শিশু গর্ভে থাকা অবস্থায় চলে আসি বাবার বাড়িতে। এক মাস আগে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে আমার সন্তান হয়। বর্তমানে বাচ্চাটাকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। নিজে দুমুঠো খেতে পারি না। এজন‌্য বাচ্চাও কোনো খাবার পায় না। আমার স্বামী থেকেও নেই। কিন্তু আমি আমার বাচ্চাদুটিকে হারাতে চাই না। এরাই আমার জীবনের সব। সবার কাছে আমার অনুরোধ, আমার বাচ্চাটাকে বাঁচান। আল্লা আপনাদের অনেক ভালো করবে।’ 

সাবিনা জানান, বাবার সংসারের এমন অবস্থায় দুই শিশুকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। চক্ষু লজ্জায় হাত পাতেন না কারো কাছে। কখনো মনে করেন খাবারের জন্য একটি সন্তানকে দত্তক দিবেন। আবার মায়ার টানে তাও করতে পারছেন না। তাই সমাজের সামর্থবানদের প্রতি তিনি সাহায‌্যের জন‌্য অনুরোধ করেছেন।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত হোসেন জানান, সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের গুয়াবাড়ী ঘাট খামারি পাড়া গ্রামের সাবিনা বেগমের বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সরকারি আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

জয়পুরহাট/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়