ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

চাঁদপুরে নারী কয়েদির মৃত্যু; বক্তব্য মিলেনি জেল সুপার ও জেলারের

অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৬, ১৩ আগস্ট ২০২১  
চাঁদপুরে নারী কয়েদির মৃত্যু; বক্তব্য মিলেনি জেল সুপার ও জেলারের

চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যেই জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে উম্মে হাছিনা (৪১) নামের এক নারী কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। মৃতের করোনা উপসর্গ পরিলক্ষিত হওয়ায় তার করোনা ছিল কিনা, সেটা যাচাইয়ের জন্য স্যাম্পল কালেকশন করেছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) বিকালে বিষয়টি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল। তিনি জানান, ওই নারী কয়েদিকে হাসপাতালে মুমুর্ষ অবস্থায় কারারক্ষীরা নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তার চিকিৎসা শুরু করার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই তিনি মারা যান। তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ছিল। এছাড়াও জ্বর ও কাশি ছিল বলে জানতে পেরেছি। তাই তার করোনা ছিল কিনা, সেটি পরিক্ষার জন্য আমরা ইতিমধ্যেই স্যাম্পল কালেকশন করেছি।

ওই মৃত নারী কয়েদির বড় মেয়ে মুন্নী জানান, আমাদের বাড়ি কচুয়ার রহিমানগর এলাকার তালতলী গ্রামে। আমার আব্বা মাহবুবুর রহমানকে নিয়ে আম্মার মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আমাদেরকে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয়। তাই দ্রুত সময়ে আমার অন্য ভাইকে আম্মার মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত জানাতে পারলাম না বলে খুব খারাপ লাগছে।

মৃত উম্মে হাছিনার স্বামী মাহবুবুর রহমান জানান, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় ২টি মাদক মামলা ছিল। ২০১৫ সালের ১৯ জুলাইয়ে জিআর-১১১/১৫ এর কচুয়া থানার মামলা নং-১২ এ জামিনে ছিলেন তার স্ত্রী উম্মে হাছিনা। পরবর্তীতে গেল ২০২০ সালের ২৭ মে কচুয়া থানার মামলা নং-১৪ জি.আর.-৮০/২০-এ তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছিল। প্রায় ১৩/১৪ মাস জেল খাটার মুহূর্তেই তার এই মৃত্যুর পরিণতি দেখতে হলো।

এদিকে নারী কয়েদির মৃত্যুর খবর শুনে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা কারারক্ষী কামরুলকে খুব আতঙ্কিত দেখা গেছে।

চাঁদপুর জেলখানার কারারক্ষী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৩০০ বন্দি ধারন ক্ষমতাসম্পন্ন এই কারাগারটিতে ধারন ক্ষমতার চেয়েও বেশি কয়েদি রয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত পুরুষ ৭১৫ এবং নারী ২৬ জনসহ মোট ৭৪১ জন বন্দি রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, এই কারাগারটিতে ৩টি মহিলা ওয়ার্ডে সর্বমোট ২৬ জন নারী কয়েদি রয়েছে। ৫ জন নারী কয়েদি আইসোলেশনে ১টি ওয়ার্ডে থাকলেও অপর ১টি ওয়ার্ডে ১১ এবং অন্যটাতে ১০ জন নারী কয়েদি রয়েছে।

এদিকে নারী কয়েদির মৃত্যুর খবরে জেল খানায় কোনরূপ করোনা ঝুঁকির প্রভাব রয়েছে কিনা? এমনকি মৃত ওই নারী কয়েদি উম্মে হাছিনার ওয়ার্ডের অন্যান্য নারী কয়েদিরা সুরক্ষিত রয়েছেন কিনাসহ বিস্তারিত জানতে জেল সুপার এনায়েত উল্ল্যাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেননি।

এমনকি তথ্য নিতে জেলখানায় সরজমিনে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এসময় চাঁদপুর কারাগারের জেলার গোলাম দস্তগীরকে হেঁটে যেতে দেখে কথা বলতে চাইলেও তিনি প্রতিবেদকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ দেখিয়ে কারারক্ষী আমিনুল ইসলামের থেকে তথ্য নেওয়ার কথা বলে চলে যান।

যদিও কারারক্ষী আমিনুল ইসলাম কয়েদির পরিসংখ্যান ব্যতীত আর কোন তথ্যই তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ দিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন। সে কারণে জেলখানায় থাকা কয়েদিদের মানবধিকার নিশ্চিতে করোনা সুরক্ষা সম্পর্কিত কোন তথ্যই চেষ্টা করেও নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে জেলখানার এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তার তথ্য সহায়তায় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এমন অনীহার কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সরোয়ার। তিনি জানান, গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য প্রাপ্তিতে জেলখানার এই দুই কর্মকর্তার সমন্বয়ের বিষয়ে দ্রুত খোঁজ-খবর নিচ্ছি। মাদক মামলার ওই নারী কয়েদির লাশ আমরা ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে কারারক্ষীদের হেফাজতে রেখেছি। আমি জেলখানার কয়েদিদের করোনা সুরক্ষার ব্যপারেও দ্রুতই খোঁজ-খবর নিয়ে পরবর্তীতে আপনাদের জানাতে পারবো।

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়