ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হাজারো অভুক্ত বানরকে খাওয়ান বিকিরন চাকমা 

বিজয় ধর, রাঙামাটি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২০, ২৯ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৭:২৫, ২৯ আগস্ট ২০২১
হাজারো অভুক্ত বানরকে খাওয়ান বিকিরন চাকমা 

অনাহারী বানরগুলোর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন বিকিরন চাকমা। স্থান: রাজবন বিহার, রাঙামাটি

করোনা মহামারির কারণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় তীর্থ স্থান রাজবন বিহারে আশ্রয় নেওয়া হাজারো বানর এখন খাদ্য সংকটে। বিগত সময়ে রাজবন বিহার কমিটি ও দর্শনার্থীদের দেওয়া খাদ্যে বানরগুলোর চাহিদা মিটাতে পারলেও বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে খাদ্য সংকটে পড়েছে বিহারের পাশে অবস্থানরত বানরগুলো।

রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, রাজবন বিহারের তিনটি টিলায় তিনটি বানরের গ্রুপ রয়েছে, যেখানে বানরের সংখ্যা হাজারের অধিক। প্রতিনিয়ত বানরগুলোর সংখ্যা বাড়লেও সে পরিমাণ তারা খাদ্য পাচ্ছে না। খাদ্য না পেয়ে অনেক সময় এসব বানর বিহার এলাকায় খাদ্যের জন্য বিভিন্ন স্থানে হামলা করে।

এদিকে, রাজবন বিহারের উপাসক সবুজ চাকমা বলেন, করোনার আগে তো প্রতিদিন মানুষ বিহারে আসতো এবং অনেক খাদ্যদ্রব্য দান করতো, তখন বানরদের খাবারের কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন করোনার কারণে রাঙামাটি রাজ বনবিহারে সব ধরনের বড় অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে এখানকার বানরগুলো খাবারের সংকটে ভুগছে। সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমার আহবান থাকবে, এসব বানরের জন্য কিছুটা হলেও খাবারের যোগান দেবেন।

সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে প্রাকৃতিক বনের মাঝে গড়ে তোলা হয় রাজবন বিহারটি। সে সময় কিছু বানর দেখা যেত বন বিহার এলাকায়। ধীরে ধীরে রাঙামাটি শহরে গাছপালা উজাড় হয়ে গেলে বানরগুলো আশ্রয় নেয় রাজবন বিহারে থাকা গাছগুলোতে। আর সে থেকেই বনবিহার হয়ে উঠেছে বানরদের আশ্রয়স্থল।

রাজবন বিহারের বানদের জন্য প্রতি শুক্রবার খাবার দানকারী পুণ্যার্থী বিকিরন চাকমা বলেন, প্রয়োজন কোনো বাঁধা মানে না। রাজবন বিহারে করোনার আগে অনেক পুণ্যার্থী আসতো। কিন্তু করোনার কারণে এখন লোকজন কম আসে। এজন্য বানরগুলোও খেতে পায় না। আমিও চিন্তুা করলাম এতগুলো প্রাণী ক্ষুধার্ত থাকবে কেন? তাই আমি সাধ্যমতো এসব বানরকে শুক্রবারে এসে খাবার দিয়ে থাকি। তাদের পেটের ক্ষুধা মিটানোর চেষ্টা করি।

রাঙামাটি রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমীয় খীসা বলেন, করোনাকালীন লকডাউনের কারণে আমাদের ধর্মীয় যে অনুষ্ঠানগুলো হতো, সেগুলো এখন বন্ধ রয়েছে। আর্থিক দৈন্যতার কারণে আমরা সবসময় বানরগুলোকে খাবার যোগান দিতে পারি না। 

তিনি বলেন, এরপরও রাজবন বিহারের বিকিরন চাকমা নামে এক পুণ্যার্থী বানরগুলোকে প্রতি শুক্রবারে এসে খাবার দিয়ে যান। এছাড়াও বিহারের ভান্তেদের উচ্ছিষ্ট খাবার থাকে, সেগুলো বানরদের দেওয়া হয়। বানরগুলোর খাবারের সংকট নিরসনের জন্য কেউ যদি সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করতে চান, আমরা রাজবন বিহার পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের উদাত্ত আহবান জানাই।

এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রাজবন বিহারের বানরগুলোর খাবার সংকটের কথা শুনে আমি বানরদের কিছু খাবার বিতরণ করেছি। শুনেছি বানরগুলো স্থানীয়দের কাছ থেকে কিছু খাবার পাচ্ছে। কিন্তু আগে বনবিহারে পুণ্যার্থীরা প্রচুর খাবার নিয়ে আসতেন। আমি বিহার পরিচালনা কমিটিকে বলেছি পরবর্তী সময়ে আমাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করবো।

এদিকে, রাঙামাটি রাজবন বিহারের আওতাধীন বনাঞ্চলে থাকা এই হাজারো বানর বাঁচানোর জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পুণ্যার্থী ও স্থানীয়রা।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়