পাবনায় ২ মাস পানিবন্দি ৩০০০ পরিবার
পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
দুই সপ্তাহ আগে টানা বর্ষণে যমুনা নদীর পানি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয় পাবনার নিম্নাঞ্চল। সেইসঙ্গে নদী তীরবর্তী কিছু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। তেমনিভাবে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমড়া ইউনিয়নে ঢুকে পড়া পানি বের হতে না পেরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ওই ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার দীর্ঘ দুই মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ অঞ্চলের মানুষ। প্রয়োজনীয় খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ঔষধের অভাবে দিন কাটছে বানভাসি কর্মহীন হয়েপড়া হাজার হাজার মানুষের। পানিবাহিত ও মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিনে ৪শত পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিলেও বাকি পরিবারগুলোর দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পানিবন্দি নাগডেমড়া ইউনিয়নের ছোট পাতাইলহাট, বড় পাতাইলহাট, সেলন্দা, ক্ষিদির গ্রাম, নাগডেমড়া, আটিয়াপাড়া, বড় সোনাতলা, ছোট সোনাতলা, বৈরাগী সোনাতলা, হাড়িয়া, পাটগাড়ী, চিনানাড়ী, ছোট নারিন্দাসহ প্রায় ১৬টি গ্রামের চারিদিকে শুধু পানি। প্রায় প্রতিটি বাড়ির বসতঘরে হাঁটুপানি। এদের কেউ কেউ পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ ঘরের সঙ্গে বাঁশের সাঁকো বেধে এরপর কলার ভেলা দিয়ে বাইরে এসে কাজকর্ম করছেন। পানিবন্দি হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। দেখা দিয়ে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট।
ভুক্তভোগী মিন্টু শেখ ও হামিদুল শেখ বলেন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ পানিবন্দি রয়েছেন। দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করছেন। অবশেষে পরিবারের সবাইকে শশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন তারা। গরু ছাগল বিক্রি করে দিয়েছেন।
শামসুন্নাহার, শারমিন আক্তারসহ বেশ কয়েকজন গৃহবধুর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, দুই মাসের ও অধিক সময় ধরে পানিবন্দি রয়েছেন। বাড়িতে রান্না করার মতো জায়গা নেই। খেয়ে না খেয়ে পানির মধ্যে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই। বাথরুমসহ যাবতীয় জিনিসপত্র ডুবে আছে। রাত আসলে নির্ঘুম রাতযাপন করতে হয়।
নাগডেমড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের প্রায় ৩ হাজার পরিবার দুই মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পাননি তিনি। সপ্তাহ খানেক আগে সামান্য ৪ টন খাদ্যসামগ্রী পান। তিনি নিজ থেকে যতটুকু পেরেছেন সহযোগিতা দিয়েছেন।
সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাক্তার মামুন আব্দুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি থাকার দরুণ পানিবাহিত ও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ হতে পারে। পানিবাহিত রোগের মধ্যে টাইফয়েড, কলেরা, ডায়রিয়া, জন্ডিস হতে পারে। মশাবাহিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গুরোগ, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ারোগ হতে পারে। এছাড়াও জ্বর ঠান্ডা কাশি হতে পারে। বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি চিকিৎসাসেবা না দিলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতে পারে বলে জানান তিনি।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম জামাল আহমেদ বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান থেকে তিনি জেনেছেন প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রায় ৪শত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। বাকি পরিবারের জন্য ত্রাণ বরাদ্ধ নিতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর বাজেট বরাদ্দ পেলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
পাবনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে, যেকোনো সময় বন্যাকবলিতদের কাছে পৌঁছে যাবে। এছাড়াও গবাদি পশুর জন্য গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্য বরাদ্দ আসছে। সেগুলোরও তালিকা তৈরি করে বিতরণ করা হবে।
শাহীন/বকুল
আরো পড়ুন