ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত

ঝালকাঠী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১  
বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত

সারাদেশের মতো ঝালকাঠীর সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে।  তবে বন্যা ও জোয়ারের পানিতে ১০টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।  এদিকে টানা বন্ধ থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে।  যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

ঝালকাঠী জেলায় ৯৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।  এর মধ্যে কলেজ ২৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৭৩টি, নিম্ন মাধ্যমিক ২৪, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৮৫টি ও মাদ্রাসা রয়েছে ১২৩টি।

এর মধ্যে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতীর এবং দুর্গম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বন্যার পানি ঢুকে তলিয়ে যায়।  এতে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না।  

সরেজমিনে দেখা যায়, উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বন্যা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে। টিনসেডের অবকাঠামো দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।  এ অবস্থায় গতকাল রোববার বিদ্যালয়টি খুললেও পাঠদান সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যেকোনো সময় বিদ্যালয়টির অবকাঠামো ভেঙে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় এ বিদ্যালয়ের ৩১৯ শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন।

পানি উঠে পাশের আখরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ছোট একটি ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।  এদিকে সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের অর্ধেকাংশ নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় পাশের একটি মাদ্রাসায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।  নদীতীরবর্তী ও দুর্গম এলাকার ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও বন্যার পানি ঢুকে থাকায় সবগুলো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও বন্যার পানিতে নলছিটির মাটিভাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভেরনবাড়িয়া সিএইচইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভেরনবাড়িয়া আলিম মাদ্রাসা, জুরকাঠি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জুরকাঠি দাখিল মাদ্রাসাসহ জেলার ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  টিনসেডের অবকাঠামোর বিদ্যালয়গুলোতে পাকা ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন শিক্ষকরা।

পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. সাকিব বলেন, বিদ্যালয়ের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের দুটি টিনসেডের ঘরে আমাদের পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এর একটিতেও পাঠদান হচ্ছে না।  পানি ঢুকে বেঞ্চের নিচে কাদা জমে আছে। করোনায় অনেক দিন বন্ধ থাকার পর স্কুল খুললেও আমাদের ক্লাস হয়নি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিম বলেন, অনেক আশা নিয়ে স্কুলে এসেছিলাম, কিন্তু ক্লাসে ঢুকতে পারিনি।  খুবই কষ্ট হচ্ছে।  পুরো বিদ্যালয়টি পানিতে তলিয়ে আছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রুহুল আমিন বলেন, শিক্ষকদের বসার জন্য একটি কক্ষ উঁচু জায়গায় রয়েছে, সেখানে একটি ক্লাস নেওয়ার মতো ব্যবস্থা করেছি। আমাদের বিদ্যালয়টি অনেক পুরনো, এখানে একটি ভবন দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।

মাটিভাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অস্টম শ্রেণির ছাত্র হৃদয় বলেন, সকালে বিদ্যালয়ে এসে দেখি পানিতে তলিয়ে আছে। খেলার মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে থাকায় ভয় পাচ্ছি।

মাটিভাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহসিন আলী মৃধা বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিদ্যালয় খোলা রেখেছি।  কিন্তু বন্যার পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ তলিয়ে আছে।  শিক্ষার্থীদের কোন রকমে ক্লাস করানো হচ্ছে। আমাদের কোনো ভবন নেই, টিনসেডের ঘর।  এ অবস্থায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

নলছিটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার আজিম বলেন, বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এবং অবকাঠামো ভেঙে পড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত নিজ খরচে মেরামত করার জন্য বলা হয়েছে।  প্রয়োজনে পাশের কোন উঁচু স্থানে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে।  

অলোক/সুমি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়