ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

একটু বৃষ্টিতেই পুরো গ্রামের পানি এসে জমা হয় স্কুলে

গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:৪৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
একটু বৃষ্টিতেই পুরো গ্রামের পানি এসে জমা হয় স্কুলে

জলাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের হাউসনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া। 

একটু বৃষ্টিতেই পুরো গ্রামের পানি এসে জমা হয় স্কুলে, তৈরি হয় জলাবদ্ধতা।  আর এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। 

বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাউসনগর গ্রামের বৃষ্টির পানি স্কুলের পাশে থাকা একটি সরকারি ডোবাতে এসে জমতো। কিন্তু কয়েকমাস আগে মহানন্দা নদীতে ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নদীর বালু দিয়ে ডোবার গর্ত পূরণ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এই কাজটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে গর্ত পূরণ হয়ে গেলে গ্রামের সকল বৃষ্টির পানি স্কুলের মাঠ ও বারান্দায় এসে জমা হচ্ছে। 

১৮ মাস পর গত ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশে  স্কুল খোলা হলেও এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন ক্লাস হয়নি। দুইদিন পর পানি কমে গেলে চালু হয় স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম। এরই মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র স্কুলে আসার পথে পানিতে পড়ে গিয়ে বই-খাতা সবকিছু ভিজে নষ্ট হয়।

সহকারী শিক্ষক মুক্তারা খাতুন বলেন, স্কুল বন্ধের সময়ে অনেকের মুখে শুনেছি আমাদের স্কুল পানিতে ডুবে আছে। স্কুলে এসে দেখি ঘটনা সত্য। অথচ প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণের কারণে স্কুল বন্ধের আগের পরিস্থিতি এমন ছিল না। হাজারো বৃষ্টি হলেও স্কুলের মাঠে বা বারান্দায় পানি জমতো না। অপরিকল্পিতভাবে গর্ত ভরাট করার কারণে এমনটা হয়েছে। 

স্কুলটির ৫ম শ্রেণির ছাত্র শিমুল রানা জানান, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলা হলে এসে দেখি হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে আমাদের স্কুল। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। ক্লাসে যেতে হলে হাঁটু সমান পানি পেরোতে হবে। 

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নাবিউল ইসলাম বলেন, মাঠে খেলতে না পারায় আমাদের মন খারাপ।  গত এক সপ্তাহে বৃষ্টি হয়নি, তাই স্কুলের মাঠ বা বারান্দায় পানি জমে নেই। কিন্তু পুরো মাঠজুড়ে জমে থাকা পানির কারণে পিচ্ছিল হয়ে আছে। আমরা যাতে খেলতে গিয়ে পড়ে না যায়, তাই স্যারেরা খেলতে মানা করেছে। 

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিম বলেন, বৃষ্টি তো দূরের কথা, ভারী বর্ষণেও গত ৩ দশক ধরে এই স্কুলে কোনদিন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। অথচ এখন কয়েক মিনিট বৃষ্টি হলেই গ্রামের সমস্ত পানি এসে জমা হয় স্কুল মাঠে। এতে স্কুলের পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করার কারণে বর্তমানে এমন দূর্ভোগে পড়তে হয়েছে আমাদের। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও চৌডাল ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ জমা দিয়েছি। ইউএনও মহোদয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিলে তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেছেন না।

চৌডালা ইউপি চেয়ারম্যান মোহা. শাহ আলম জানান, স্কুলের পাশে থাকা একটি ডোবা ভর্তি করার কারণে স্কুলে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। ডোবাটি সরকারি রাস্তা হওয়ার নদী ড্রেজিংয়ের বালু পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ভরাট করা হয়েছে। স্কুলের জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রয়োজনে স্কুলের মাঠেও ভরাট করে উঁচু করে দেওয়া হবে, যাতে পানি আসতে না পারে। 

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, হাউসনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জলাবদ্ধতা নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে পরবর্তী সময়ে এডিবি'র বরাদ্দ আসলেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রেন নির্মাণ করে গ্রামের সকল বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবি বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। হাউসনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ২৪৪ জন শিক্ষার্থী ও ৬ জন শিক্ষক রয়েছে। 

আব্দুল বাশির/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়