ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘হামরা কি প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি পামো না?’

আমিরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১  
‘হামরা কি প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি পামো না?’

‘প্রধানমন্ত্রী তো সবাকই মেলা কিছু দেয়। হামাক কি একটা বাড়ি দিবার পায় না? অসুস্থ মেয়েটাক নিয়া খুব কষ্টোত আছি। চিকিৎসাও করবার পারতেছি না। মানষের বাঁশঝাড়োত কোনো রকম বাড়ি করি আছি। অনেকে আসি খালি কয় পাইবেন পাইবেন কিন্তু পরে আর পাই না। হামরা কি প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি পামো না?’

চার সন্তান নিয়ে অন‌্যের বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেওয়া ষাটোর্ধ্বো বৃদ্ধ মো. জুলু মণ্ডল অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন আবেদন করেছেন।

জুলু মণ্ডল রংপুরের কাউনিয়া উপজেলাধীন বালাপাড়া ইউনিয়নের হলদীবাড়ী এলাকার মৃত ওমর মণ্ডলের ছেলে। জুলু একজন ভূমিহীন মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে অনেক কষ্টে এই বৃদ্ধ সংসার চালান।

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, ৩ মেয়ে ও এক ছেলে  নিয়ে বৃদ্ধ জুলু মণ্ডলের সংসার। তার জমিজমা নেই। নেই বসবাস করার ভিটে মাটিও। তাই পরের বাশঁঝাড়ের জমিতে বাড়ি করে কোনো রকমে চার সন্তান নিয়ে থাকেন এই বৃদ্ধ। এদিকে, জুলু মণ্ডলের মেয়ে স্বপ্না অসুস্থ। গত কয়েক বছর ধরে পচন রোগে ভুগছেন স্বপ্না। অর্থের অভাবে অসহায় এই বাবা মেয়ের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। তাই সবার সহযোগিতায় উন্নত চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়েছেন অসুস্থ স্বপ্না খাতুন।

অসুস্থ মেয়ের বিষয়ে জুলু মণ্ডল জানান, এক ছেলে তিন মেয়েকে রেখে ১৬/১৭ বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। পরের আশ্রয় দেওয়া বাঁশ ঝাড়ে বাড়ি করে মা হারা ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছেন তিনি। তার বড় মেয়ে স্বপ্না দীর্ঘ দিন থেকে শরীরে পচন রোগে ভুগছে। তার চিকিৎসা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। মেয়ের চিকিৎসার সামার্থ্য তার নেই। তাই সরকারসহ সমাজের বিত্তবান, হৃদয়বান ও দানশীল ব্যক্তিদের সাহায্য কামনা করেছেন তিনি।

তাদের আশ্রয়দাতা মজিবর রহমান জানান, ‘জুলু মণ্ডল একটি খাস জমিতে ছিল। পরে অন্যরা সেটিও নিয়ে নেওয়ায় বিপাকে পড়ে জুলু। এরপর তিনি জুলুকে তার পরিত্যাক্ত বাঁশঝাড়ে ঘর করে থাকতে দেন। সরকার গরীব অসহায় মানুষের জন্য বাড়ি করে দিচ্ছে। জুলু যদি জমিসহ একটা বাড়ি পায় তাহলে এই বৃদ্ধ বয়সে সে মাথা গোঁজার একটা ঠাই পাবে।’
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, ‘এরই মধ্যেই জুলুর বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। আর তার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছা. তাহমিনা তারিন বলেন, ‘জুলু মণ্ডলের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবো। ওই এলাকায় যদি কোনো খাস জমি পাই অথবা কেউ যদি ২ শতক জমি দান করেন তাহলে সেখানে তার জন‌্য ঘর নির্মাণ করে দিবো। আর যদি সেটি পাওয়া না যায় তবে দ্বিতীয় মেয়াদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রায়ণ প্রকল্পে ঘর দিয়ে তাকে পূর্নবাসনসহ মেয়ের চিকিৎসার ব‌্যবস্থা করা হবে।’

রংপুর/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়