ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঘোজাডাঙ্গায় ‘সিরিয়াল’ আতঙ্ক 

শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ৩ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১১:০১, ৩ অক্টোবর ২০২১
ঘোজাডাঙ্গায় ‘সিরিয়াল’ আতঙ্ক 

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় পণ্যবাহী ট্রাকের সিরিয়ালের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, টাকা না দিলে একেকটি পণ্যবাহী ট্রাককে সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে হয় কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ দিন। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকরা বাধ্য হয়েই অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন। ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ এই স্থলবন্দরটি তার কর্মচাঞ্চল্য ও রাজস্ব হারাচ্ছে।

ভোমরা বন্দরে উভয় দেশের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের যৌথসভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সিরিয়ালের অজুহাতে চাঁদাবাজি বন্ধের জোর দাবি জানালেও কোন সুরাহা হয়নি। তবে বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক। 

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৯৬ সালের ১৫ মে ২১টি পণ্য নিয়ে শুল্ক স্টেশন হিসেবে ভোমরা স্থল বন্দর যাত্রা শুরু করে। ২০১০ সালে আরও ২৬টি পণ্য নতুন করে যুক্ত হয়। মোট ৪৭টি পণ্যের অনুমোদন নিয়ে পুর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরের মর্যাদা পায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০১৮ সালে এই বন্দরে নতুন ৩১টি পণ্য আমদানি রপ্তানির অনুমতি দেয়। 

এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বন্দর প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই উভয় দেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন আলোচনার ভিত্তিতে সিরিয়াল অনুযায়ী আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে। 

ব্যবসায়িদের অভিযোগ, গত জুন মাস থেকে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা পার্কিং ইয়ার্ডগুলোতে শুরু হয় সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি।  ট্রাক প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে পারলে পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা বন্দরে আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। আর না পারলে সিরিয়ালের জন্য ভারতের ওপারে ৩০ থেকে ৫০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এর ফলে পচনশীল কাঁচা পণ্যগুলো নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে তাদের। 

পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভোমরা বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে ব্যবসা করবেন বলে আমদানিকারকরা জানান। 

ভারতের ঘোজাডাঙ্গা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অচিন্ত কুমার ঘোষ রাইজিংবিডিকে জানান, বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি উভয় দেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে চাঁদাবাজির বিষয়ে কথা বলতে নারজ ঘোজাডাঙ্গা সিঅ্যান্ডএফ এর কর্তারা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ি বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে স্থানীয় এক প্রভাবশালি ব্যাক্তি ভারতের রপ্তানিকারক বারিক বিশ্বাসের ইন্দনে দুই জায়গায় চলছে এই চাঁদাবাজি। প্রতিবাদ করলে পচনশীল কাঁচা পণ্যবাহী ট্রাককে আটকে থাকতে হচ্ছে মাসের পর মাস। ট্রাকপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। 

ভারতের রপ্তানিকারক বারিক বিশ্বাস অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, এখানে চাঁদাবাজির কোন ঘটনা ঘটছে না, আগে যেসব কমিটি ছিল তারা ভোটে হেরে তার নামে মিথ্যাচার করছে। 

তবে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজি নওশাদ দেলওয়ার রাজু ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দরে পণ্যবাহি ট্রাকের সিরিয়ালের নামে চলছে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি। চাঁদা দিতে পারলে যেকোনো পণ্যবাহী ট্রাক ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। 

সাতক্ষীরা/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়