ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পাখি যে গ্রামের মানুষের পরিবারের অংশ 

পঞ্চগড় সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ৭ অক্টোবর ২০২১  
পাখি যে গ্রামের মানুষের পরিবারের অংশ 

চিরসবুজ গ্রাম নাজিরপাড়া। দেশের অন্য আর দশটি গ্রামের মতোই ছায়া-সুনিবিড় এই গ্রাম। তবে ছোট্ট একটি পার্থক্য আছে। পার্থক্য গড়ে দিয়েছে অতিথি পাখি এবং গ্রামের মানুষের পাখিপ্রেম।

গ্রামের ছোট-বড় বিভিন্ন গাছ এবং বাঁশঝাড়ে গড়ে উঠেছে পাখির অভয়াশ্রম। পাখির কলতানে দিনরাত মুখরিত থাকে গ্রামের পরিবেশ। এমন দৃশ্য উপভোগ করতে আশপাশের জেলা থেকে ছুটে আসেন পাখি ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এখানে এ ভাবেই পাখি ও মানুষ পাশাপাশি বসবাস করছে। গ্রামের মধ্যেই গড়ে উঠেছে পাখির অভয়াশ্রম। এর শুরুটা হয়েছিল পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভার নাজিরপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া সেলিমের বাড়ি থেকে। এই বাড়ি এবং এর আশপাশে বড় বড় গাছ, বাগান ও বাঁশঝাড় রয়েছে। এই গাছগুলোই মূলত পাখিদের আশ্রয়স্থল। সেখানে দেখা মেলে শামুকখোল, পানকৌড়ি, রাতচোরা, ঘুঘু, মাঝলা বক, বড় বক, নিশিবকসহ দেশি প্রজাতির হাজারো পাখি। 

কথা হয় গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১৪ বছর আগে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি এখানে বাসা বাঁধে। প্রতি বছরই এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেই কেউ এদের বিরক্ত করবে না। এমনকি গ্রামে কোনো পাখি শিকারীকেও আমরা ঢুকতে দেই না। পাখিগুলো বর্তমানে আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে গিয়েছে। সন্তানের মতো আমরা পাখিদের খেয়াল রাখি।’

৭ বছর বয়সি ছেলেকে নিয়ে পাখির কলতান উপভোগ করতে এসেছেন খোরশেদ আলম পান্না। তিনি বলেন, ‘এখানকার অনেক পাখি বিলুপ্তপ্রায়। নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। যে কারণে ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে এসেছি। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি তাকে।’

বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, ‘পাখিগুলো প্রতি বছর জুলাই-অগাস্ট  মাসের দিকে আসে এবং নভেম্বরে চলে যায়। মূলত এ সময় পাখিরা প্রজনন ও বংশবিস্তার করে। এলাকায় খাদ্যশস্য থাকায় পাখিগুলো প্রজননের সময় এখানে আসে। তাছাড়া পাখিগুলো বুঝে ফেলেছে নাজিরপাড়া গ্রাম তাদের জন্য নিরাপদ।

সারাদিন বিভিন্ন এলাকায় খাবারের সন্ধানে পাখিগুলো ঘুরে বেড়ায়। বিকেল হলেই তারা নীড়ে ফিরতে শুরু করে। এ সময় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আবার ভোরে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর। এটি একটি বড় ধরনের পাখির কলোনি উল্লেখ করে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ যেন অবৈধভাবে পাখি শিকার করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে আমরা নজর রাখছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামে পাখিদের অভয়াশ্রম গড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।’ 
 

নাঈম/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়