ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চুরি আতঙ্কে এলাকাবাসীর রাত জেগে পাহাড়া 

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ১০ অক্টোবর ২০২১  
চুরি আতঙ্কে এলাকাবাসীর রাত জেগে পাহাড়া 

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে দিন ও রাতে চুরির ঘটনা ঘটছে। খাবারে ঔষধ মিশিয়ে বাড়ির লোকজনকে অচেতন করে চুরি করছে চোরদের একটি সক্রিয় সংঘবদ্ধ দল। এতে চুরির আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো উপজেলাজুড়ে। চোরদের হাত থেকে রক্ষা পেতে লাঠি-সোটা নিয়ে রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন এলাকাবাসী। 

শনিবার (৯ অক্টোবর) রাত ৯টায় উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের সৌলাপুকুর গ্রামে দেখা গেছে, একদল যুবক সময় ভাগ করে নিয়ে রাতে বাড়ি-ঘর পাহাড়া দিচ্ছেন। 

জানা গেছে, শুধু অক্টোবর মাসের ১০ দিনেই দুওসুও ও পাড়িয়া ইউনিয়নে ৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১টি চুরি হয়েছে দিনের বেলায়। বাকি ৪টি চুরি হয়েছে বাড়ির লোকজনকে অচেতন করে।  আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও ২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চুরি হয়েছে। এছাড়া সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বাড়িতে ৩টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। 

এলাকাবাসী বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পরও চুরির কোনো রহস্য উন্মোচন না হওয়ায় এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। জনমনে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। এর ফলে নিজেদের সম্পদ রক্ষা করতে নিজেরাই টর্চলাইট ও লাঠি নিয়ে রাত জেগে পাহাড়া শুরু করেছেন। তবে স্থানীয় থানার পুলিশ বলছেন, চুরির ঘটনা ঠেকাতে তারা তৎপর রয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই সব চুরির ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা হবে। 

বুধবার (৬ অক্টোবর), বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) ও শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রাতে উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের ৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৩টি গ্রামে ৩ জনের বাড়িতে চুরি হয়েছে। এদের মধ্যে সৌলাপুকুর গ্রামের গয়া প্রসাদের বাড়িতে স্পে ছিটিয়ে ৭ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ১ লাখ টাকা, পানিশাল গ্রামের নাজমুল হকের বাড়িতে ৩ লাখ টাকা ও ৬ ভরি স্বর্ণ এবং লোহাগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অতুল প্রসাদ সিংহের বাড়ি থেকে মোবাইল ও আসবাবপত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার (০৫ অক্টোবর) বালিয়াডাঙ্গী-নেকমরদহ মহাসড়কের পাশে সমিরউদ্দিন স্মৃতি কলেজের পাশে স্কুল শিক্ষক আসাদ আলীর বাড়িতে চোরেরা ৪ ভরি স্বর্ণ চুরি করে নিয়ে গেছেন। পরের দিন দুওসুও ইউনিয়নের হাসান মেম্বারপাড়া এলাকার রাজু হোসেন ও তার চাচার বাড়ির লোকজনকে অচেতন করে প্রায় ৪ লাখ টাকা চুরি হয়েছে। 

স্কুল শিক্ষক আসাদ আলী বলেন, চুরির ঘটনা পুলিশকে জানানোর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি থানায়। এ পর্যন্ত শেষ। কোন ফল পাইনি। 

পাড়িয়া গ্রামের নাজমুল হক বলেন, বাড়িতে চুরির পর থানায় লিখিত অভিযোগ জানাই। ২৪ ঘন্টা পর পুলিশ সদস্যরা আমার বাড়িতে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। রাতে পাশের গ্রামে একইভাবে চুরি হয়েছে। পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। 

সৌলাপুকুর গ্রামে রাত জেগে পাহাড়া দেওয়া যুবকরা বলেন, চুরির ঘটনা ঠেকাতে সময় ভাগ করে নিয়ে আমরা ১৫ জন পাহাড়া দিচ্ছি। চুরি বন্ধ এবং পুলিশ ৩টি চুরির রহস্য উন্মোচন না করা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। 

পাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী রুবেল বলেন, চুরির ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। ঘটনাগুলো তদন্ত করে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারসহ চোরদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। 

শনিবার (৯ অক্টোবর) রাতে পাড়িয়া ইউনিয়নে সংঘটিত দুটি চুরির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুল হক প্রধান ও উপ-পরিদর্শক আব্দুস সোবহান। 

হাবিবুল হক প্রধান বলেন, ঘটনাগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। পরিবারের সবার ঘুম ঘুম ভাব আসলে স্থানীয় চেয়ারম্যান অথবা থানায় অবগত করবেন। প্রয়োজনে আমরা পোশাক ছাড়া আপনাদের বাড়িতে এসে অবস্থান নিবো। চোরদের ধরতে স্থানীয়দের সহযোগিতা চাই। 

হিমেল/সুমি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়