ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অভিশপ্ত ভবদহ: এখন শ্যাওলা বিক্রি করে সংসার চলে তাদের 

সাকিরুল কবীর রিটন, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০২, ১০ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ২২:৫৫, ১০ অক্টোবর ২০২১
অভিশপ্ত ভবদহ: এখন শ্যাওলা বিক্রি করে সংসার চলে তাদের 

যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ২৭টি বিলের কৃষকদের দুর্বিসহ দিন শেষ হচ্ছে না। ভবদহ বিলের জলাবদ্ধতায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন তারা। জমি থাকতেও ফসল ফলাতে না পেরে মানবেতর জীবন কাটছে অনেকের। কোনো কোনো বিলে টানা নয় বছর জলাবদ্ধতার কারণে ফসল হয় না।

বাড়িতে পানি, রাস্তায় পানি, স্কুল-কলেজের মাঠ ডুবে আছে। বিলের জমির করুণদশা। পানি থাকায় সেখানে শ্যাওলা জমে ভরাট হয়ে আছে। উপয়ান্ত না পেয়ে এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নিচ্ছেন।

কোনো কোনো বিলের কৃষকরা নামমাত্র মূল্যে বড় বড় মৎস্য ঘের মালিকদের কাছে জমি লিজ দিয়ে রেখেছেন। বিলে হাজার হাজার বিঘার ঘের। অথচ এক বিঘা জমিতে তারা বছরে পান ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। গবাধি পশু পালন ছিলো এ অঞ্চলের মানুষের আয়ের আরেকটি বড় মাধ্যম। কিন্তু বাড়িতে পানি থাকায় সেটাও দুরুহ হয়ে উঠেছে। ফলে নারী-পুরুষ মিলে বদলাচ্ছেন পেশা।

এমনই এক ভিন্নধর্মী পেশা বেছে নিয়েছেন অভয়নগরের বিল ঝিকরার পাড়ের বেশ কিছু কৃষক। তারা দিনভর ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় শ্যাওলা কুড়িয়ে তা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। ভোরে সূর্য উঠার আগেই ছোট্ট ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে নেমে পড়েন বিলে। শুরু করেন শ্যাওলা কুড়ানোর কাজ। এক ডিঙ্গি নৌকা শ্যাওলা কুড়াতে লেগে যায় তিন ঘণ্টা। শ্যাওলা কুড়িয়ে বিল সংলগ্ন সড়কে স্তূপ করে রাখেন। সকাল ১০ টার দিকে আসে ঘের মালিকদের শ্যালোমেশিনচালিত ভ্যান নসিমন, করিমন। সেই নসিমন, করিমনে তারা এ সব শ্যাওলা তুলে দেন। বিনিময়ে এক নৌকা শ্যাওলার দাম হিসেবে পান ১৫০ টাকা। আর তা দিয়ে চলে পরিবারের ভরণপোষণ। বর্তমানে ভিন্নধর্মী এ পেশায় জড়িত হয়েছে এ এলাকার কমপক্ষে ২৫-৩০ জন কৃষক। শ্যাওলা ঘেরে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে জানান তারা।

কেবল ঝিকরার বিল নয়; অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা তাদের পেশা বদলাচ্ছেন। অনেক এলাকায় এভাবে বিল থেকে শ্যাওলা কুড়িয়ে বিক্রি করে জোগাচ্ছেন পরিবারের রসদ।

উপজেলার রাজাপুর গ্রামের এমনই একজন কৃষক পরিতোষ কুমার। তিনি জানান, যারা শ্যাওলা কুড়ানোর কাজ করছেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই বিলে ফসলী জমি রয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতায় নয় বছর বিল ডুবে থাকায় ফসল ফলাতে পারেন না। উপায়ন্তর না পেয়ে তারা এ পেশা বেছে নিয়েছেন। অনেকে সন্তানদের লেখাপড়া চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে পরিবারের হাল ধরেছেন। ফসল না হওয়ায় শত শত কৃষক নওয়াপাড়া নদী বন্দর এলাকায় ঘাট শ্রমিকের কাজ করছেন। ভাগ্যের বিড়ম্বনায় তাদের সুখের দিনগুলো হারিয়ে গেছে। 

পরিতোষ কুমার বলেন, ‘কেবল আমরাই নয়, অন্যান্য এলাকায় অনেকে আমাদের মতো শ্যাওলা কুড়িয়ে বিক্রি করে পরিবারের ভরণপোষণ চালাচ্ছেন।’

/বকুল/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়