ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

রংপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে ৯৫৬ মণ্ডপে চলছে দুর্গোৎসব

রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৭, ১২ অক্টোবর ২০২১  
রংপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে ৯৫৬ মণ্ডপে চলছে দুর্গোৎসব

বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব আজ সোমবার (১১ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে। এবার রংপুর জেলায় ৯৫৬টি মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেবী দুর্গার পূজা আরাধনা শুরু হচ্ছে। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় মাটি দিয়ে একেকটি প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে আজ থেকে তা পেলো পূর্ণতা। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পূজামণ্ডপ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সাদা পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন করেছে জেলা ও মহানগর পুলিশ।

সোমবার পূজার প্রথমদিনে নগরীর সবচেয়ে বড় পায়রা চত্বর মন্দির, গুপ্তপাড়া মণ্ডপ, সেনপাড়া, প্রেসক্লাব সম্মুখ কালি মন্দিরসহ বেশকিছু দূর্গা মন্দির ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রকৃতির আদলে সজ্জিত করে সাজিয়েছেন মণ্ডপগুলো। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এসব মণ্ডপে সপরিবারে এসে দেবীদূর্গার কাছে পূজা করে মনের অব্যক্ত কথা বলে প্রার্থনা করছেন।

তবে শৃঙ্খলা রক্ষায় মণ্ডপে মণ্ডপে কমিটি গঠনের পাশাপাশি বৈরি আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে অনেক মণ্ডপে ত্রিপলের ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (৬ অক্টোবর) ভোর থেকে দেবীর আবাহনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা। মহালয়ার ছয় দিন পর শুরু হবে দেবী দুর্গার আরাধনা। সেই হিসেবে সোমবার (১১ অক্টোবর) দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর মহাষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে মন্দিরে মন্দিরে প্রতিমা স্থাপন শুরু হয়েছে। এবার দেবী দুর্গা আসছেন ঘোড়ায় চড়ে, আর ফিরবেন দোলায়।

দুর্গোৎসবে মণ্ডপে মণ্ডপে বাজছে ঢাকের ঢোল, কাঁসার ঘণ্টা ও শাঁখের ধ্বনি। ভক্তদের আরাধনায় থাকবে অশুভ শক্তি বধের প্রার্থনা। পাঁচ দিনের এ উৎসবে সোমবার ষষ্ঠী আর পরদিন মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সপ্তমী। বুধবার অষ্টমী, বৃহস্পতিবার নবমী ও শুক্রবার দশমীর দিন বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

তবে এবারই ঢাকার পরে দেশের মধ্যে প্রথম শুভ মহালয়ার আয়োজন হয়েছে রংপুরের ডিমলা রাজ দেবোত্তর এস্টেটে।

এ বছর রংপুর জেলায় যে ৯৫৬টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে তার মধ্যে রংপুর মহানগরে ১৫৩টি, সদর উপজেলায় ১০২, বদরগঞ্জে ১৩২, মিঠাপুকুরে ১৪০, গংগাচড়ায় ১০৮, পীরগঞ্জে ৯৭, কাউনিয়াতে ৬৫, তারাগঞ্জে ৬৭, পীরগাছায় ৮৯টি মণ্ডপ রয়েছে।

এছাড়াও মহানগর এলাকা বাদ দিয়ে পুরো রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৫ হাজার ১৮৯টি পূজামণ্ডপ সেজেছে দূর্গা উৎসব আয়োজনে। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপ রয়েছে ১ হাজার ৩১১টি। আর গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১ হাজার ৩০৬টি পূজা মণ্ডপ। সাধারণ মণ্ডপ হিসেবে ২ হাজার ৫৭২টি পূজা মণ্ডপ চিহ্নিত করা হয়েছে।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপন সম্পন্ন করতে প্রত্যেকটি মণ্ডপে শৃঙ্খলা কমিটির পাশাপাশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এবার বিভাগে দুর্গোৎসবে র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি ৩০ হাজারের বেশি আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মতো এবারও পূজার আয়োজনে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

নগরীর আনন্দময়ী সেবাশ্রম মন্দিরের পুরোহিত রিপন চক্রবর্তী জানান, দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে চড়ে পৃথিবীতে এলেও দোলায় করে স্বর্গে ফিরে যাবেন। করোনা সংক্রমণ রোধে পূজা উদযাপন পরিষদ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দুর্গাপূজার আরাধনা চলছে।

রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধীমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘এবার রংপুরে ৯৫৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। প্রতিমা তৈরি, পূজা উদযাপন এবং প্রতিমা বিসর্জনসহ দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিষদের সদস্যরা কাজ করছেন। এর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও র‌্যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক ও সজাগ থেকে মণ্ডপগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন।

রংপুর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধনজিৎ ঘোষ তাপস বলেন, ‘দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা এই পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় উৎসব পালন করবো।’

রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপনের বিষয়টি নিয়েও মতবিনিময় করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রংপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব উদযাপন সম্পন্ন করতে পারবে। তবে মণ্ডপগুলোতে রাতে করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের সজাগ থেকে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি বলা হয়েছে।’

এ বছর রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১১ অক্টোবর দুর্গাদেবীর বেলষষ্ঠী পূজা, ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমী বিহিত পূজা, ১৩ অক্টোবর মহাষ্টমী, ১৪ অক্টোবর এক দিনে মহানবমী বিহিত পূজা এবং ১৫ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে করোনাকালের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

আমিরুল/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়