ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বগুড়ার দত্তবাড়ীতে একই রূপে বারবার ফিরে আসে দুর্গা প্রতিমা

এনাম আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ১৪ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৫:৩৯, ১৪ অক্টোবর ২০২১

করোনা মহামারি, নানা সংকট, শঙ্কার মধ্যে বছর ঘুরে মর্ত্যে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। দেবী দুর্গার আগমনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আনন্দের জোয়ার। শঙ্খ, ঢাক, কাসর আর উলু ধ্বনিতে মুখর বগুড়া শহরের পূজা মন্ডপগুলো। এর মধ্যে বগুড়ার দত্তবাড়ীর মন্দিরে ভক্ত, দর্শনার্থীদের ভিড়। শহরের সবচেয়ে প্রাচীন এই মন্দিরটিকে জাগ্রত মন্দির মনে করেন ভক্ত-অনুরাগীরা।   

দত্তবাড়ী ছিলো ব্রিটিশদের নীলকুঠি। তৎকালীন জমিদার হরচন্দ্র দত্ত ব্রিটিশদের কাছ থেকে নীলকুঠি নিলামে কিনে নেন। এরপর সেখানে বসবাসের পাশাপাশি রাধা গোবিন্দ মন্দির এবং দুর্গা মন্দির নির্মাণ করেন। এখানকার দুর্গাপূজার প্রতিমা এক কাঠামোর উপর তৈরি এবং প্রতি বছর একই রূপে প্রতিমা স্থাপন করা হয়। প্রতিমার এই রূপ শুধু দত্তবাড়ী দেবসেবা ট্রার্স্টি বোর্ড আর ছোট দত্তবাড়ী মণ্ডপে দেখা যায়। এছাড়া কোলকাতার বারাসাতের একটি মণ্ডপে দত্তবাড়ীর এই প্রতিমার স্বরূপ দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই প্রতিমার মতো একটি প্রতিমা ভারতের কাশ্মিরের জাদুঘরেও আছে। সে সময় এই প্রতিমাকে সাজাতে স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা হতো। পুরো শরীরে যে পরিমাণ স্বর্ণ ব্যবহার করা হতো তার ওজন ছিলো প্রায় ২ মণ। জমকালো এই পূজা দেখতে দূর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসতেন। এছাড়া এই পূজার ঢাক এবং শৃঙ্গ দিয়ে বাজানো বাঁশির শব্দ বহুদূর পর্যন্ত শোনা যেত।  

এরপর দত্তবাড়ী পরিবারের সদস্যরা একইভাবে প্রতি বছর দূর্গোৎসব করে আসছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দত্তবাড়ী পরিবারের সদস্যরা কোলকাতা চলে যান। সে সময় তারা দুর্গা প্রতিমায় যে স্বর্ণালংকার ব্যবহার করতেন সেগুলোও সঙ্গে নিয়ে যান। এর আগে ইংরেজদের নীলকুঠি আর হরচন্দ্রের কেনা দত্তবাড়ী রক্ষার জন্য গত ৮০ বছর পূর্বে এটিকে ট্রাস্টি করে যান বসন্ত কুমার দত্ত। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান গৌড় চন্দ্র কুন্ডু। এরপর বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তিনি তৎকালীন বগুড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করে দত্তবাড়ী ট্রাস্টিকে পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেন। দত্তবাড়ী দেবসেবা ট্রাস্টিবোর্ড এখনও বগুড়া পৌরসভার অধীনে ন্যস্ত আছে।

দত্তবাড়ী দেবসেবা ট্রাস্টি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্তী বলেন, দত্তবাড়ীতে জমিদারী রীতিতে পূজা করা হয়। মহালয়ার দিন থেকেই পূজার কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এরপর ষষ্ঠীর দিন নদীর ঘাটে গিয়ে কলাগাছ পানি দিয়ে ধুয়ে নিয়ে লালপেরে হলুদ রঙের কাপড় দিয়ে বেধে ঘটের পানি তুলে নতুন ঘট বসানো হয়। এরপর ‍শঙ্খ এবং ঢাক বাজানো হয়। সঙ্গে চলে পুরোহিতদের মন্ত্রপাঠ।  

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বগুড়া পৌর কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, পূজা নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

বগুড়া/সুমি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়