অর্ধকোটি টাকার কালভার্ট, পার হতে হয় সাঁকোতে
পটুয়াখালী সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চিকন্দিকান্দি-গজালিয়া ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনকারী কালভার্ট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ৫৫ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত এ কালভার্ট সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন। সেতুতে উঠতে গেলে ব্যবহার করতে হয় বাঁশের সাঁকো। ফলে প্রতিনিয়িত দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।
জানা গেছে, চিকন্দিকান্দি-গজালিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের যাতায়াত সুবিদার্থে ও দুর্ভোগ কমাতে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় দুটি বক্স কালভার্ট। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়।
একই খালে ১০০ মিটার দূরত্বে নির্মিত দুটি কালভার্ট জনসাধারনের নুন্যতম উপকারে আসেনি বলে দাবি এলাকাবাসীর। খালের মাঝখানে র্নিমাণ করা সেই কালভার্ট দুটি এখোনো সড়ক থেকে বিচ্ছিন্নই রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত দুইটি কালভার্ট ব্যবহার করতে স্থানীয়ভাবে স্থাপন করা হয়েছে চারটি বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো সংযুক্ত সেতু পার হতে অহরহ দুঘটনার শিকার হয় নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চিকন্দিকান্দি-গজালিয়া সীমান্তে ১১০ ফুট প্রশস্ত পানখালি খালের অবস্থান। এলাকাবাসীর দাবির ভিত্তিত্বে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের হানিফ মেম্বারের স্ব-মিল সংলগ্ন ওই খালের উপরে কালভাট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় গলাচিপা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়। মাত্র একশ মিটার দুরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয় ওই খালের উপরে।
একটি কালভার্ট র্নিমাণের পর থেকেই পরিত্যক্ত রয়েছে। পরিত্যক্ত ওই কালভার্টটি মাঝে মধ্যে স্থানীয় কৃষকরা কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। অপর কালভার্টির গুরুত্ব থাকলেও তা ব্যবহারে শতভাগ অনুপযোগী।
স্থানীয়রা জানান, ১১০ ফুট প্রশস্ত খালের উপরে মাত্র ৩০ ফুট দৈর্ঘের কালভার্ট র্নিমাণ করা হয়েছে। ফলে কালভার্টের দুই প্রান্ত থেকে মূল সড়কে অন্তত ৮০ ফুট ফারাক থেকে যায়। তাই সনাতন পদ্ধতির সাঁকো দিয়ে সেতুতে উঠতে হচ্ছে মানুষজনকে। এছাড়া মাঝে মধ্যে সাঁকো ভেঙ্গে বিপদে পরেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় আব্দুল বারেক হাওলাদার বলেন ‘দুই বছর আগে একই স্থানে দুটি কালভার্ট র্নিমাণ হয়েছে। ১১০ ফুট চওড়া খালের উপরে ৩০ ফুট কালভার্ট হওয়ার ফলে সেটি সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন । একই স্থানে দুটি না হয়ে ওই টাকা দিয়ে একটি র্নিমান হলে অন্তত এলকাবাসী কালভার্টের সুবিধা ভোগ করতে পারতো।’
আব্দুল আজিজ হাওলাদার বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তির জন্য কালভার্ট (সেঁতু) হয়েছে। কিন্তু জনগণ এর সুফল পায়না। র্নিমাণকালে বারবার আপত্তি দেওয়া সত্ত্বেও অফিসার ও ঠিকাদার আমাগো কথায় কান দেয়নি।’
স্থানীয় পানখালির মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হাসান মাহামুদ বলেন, ‘খালের প্রশস্ত অনুযায়ী দরকার ছিল সেতু। সেখানে দেওয়া হয়েছে বক্স কালভার্ট। খালের এপাড়-ওপাড় স্কুল ও মাদ্রাসা মসজিদ রয়েছে। তাছাড়া দুই ইউনিয়নের হাজারও মানুষ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সরকার সেঁতু দিয়েছে। আর এই সেঁতু আমরা এখোন সাঁকো দিয়ে পাড় হই। ’
স্থানীয় শিক্ষার্থী মামুন মোন্তাসির বলেন, ‘একই খালে পাশাপাশি দুইটি বক্সকালভার্ট দেয়ার আদৌ কোন যুক্তি আছে কিনা, তা আমার জানা নেই? শুধু অপরিকল্পিত উন্নয়নে অর্থের অপচয় ঘটেছে।’
গলাচিপা উপজেলা র্নিবাহী অফিসার আশিষ কুমার বলেন, ‘ওই প্রকল্প আমি এখানে যোগদানের আগেই হয়েছে তাই আমি অবগত নই। এখন যেহেতু বৃষ্টিপাত হচ্ছে আবহাওয়া খানিকটা অনুকুলে আসলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবো।’
বিলাস/মাসুদ
আরো পড়ুন