ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সবুজে ভরা ফসলের মাঠে একখণ্ড সোনা রঙ

মাহমুদুল হাসান মিলন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১৯ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১২:৪৩, ১৯ অক্টোবর ২০২১
সবুজে ভরা ফসলের মাঠে একখণ্ড সোনা রঙ

দৃষ্টিজুড়ে ছড়ানো সবুজে ভরা ফসলের মাঠে যেন হঠাৎ এক খণ্ড সোনা রঙ। আসলে এটি হচ্ছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত আগাম জাতের বিনাধান-১৭। 

চলতি আমন মৌসুমে চাষ করা স্থানীয় জাতের ধানের এখনো থোর বের না হলেও বিনাধান-১৭ পেকে গেছে। ফলে দূর থেকে দেখলে অনেকটা এমনি মনে হয়। ইতোমধ্যে এই জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চাষিদের ব্যাপক রেখাপাত করেছে। 

ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের কোনাগাঁও কেজাইকান্দা গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন। তার দুই একর জমিতে আমন ধানের আবাদ রয়েছে। এরমধ্যে তিনি বিনার বিজ্ঞানীদের পরামর্শে ত্রিশ শতক জমিতে বিনাধান-১৭ চাষ করেছেন।  

কৃষক হেলাল জানান, অন্যান্য জাতের ধানের এখনো থোর না হলেও বিনা-১৭ ধান পেকে গেছে। ফলনও ভালো হয়েছে।  এত অল্প সময়ে ধান পাকা দেখে এলাকার অনেক কৃষক অবাক হয়েছে।  

তিনি বলেন,  আগামী মৌসুমে পুরো জমিতে এই ধানের আবাদ করবো। 

একই গ্রামের কৃষক কৃষিবিদ একেএম আজিজুল হক দুদু বলেন, ৫২ শতক জমিতে বিনা-১৭ চাষ করেছি। ধান কাটা শেষ। এখন সরিষা চাষ করবো। বোরো মৌসুম শুরুর আগেই সরিষা কাটা হয়ে যাবে। একটা ফসল অতিরিক্ত পাবো। এটা আমার জন্য বাড়তি লাভ হবে। বিনা-১৭ ধানের চাষের জন্য এলাকার অনেক কৃষক পরামর্শ নিচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে কয়েক বছরের মধ্যে এটি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। 

গ্রামের আরেক কৃষক সোমাইমান মিয়া বলেন, এমন অল্প সময়ে ধান পাকতে কখনো দেখিনি। আমাদের এলাকায় এটাই প্রথম। আগে জানলে আমিও চাষ করতাম। তবে আগামী মৌসুমে এই ধানের আবাদ করবো। 

বিনাধান-১৭ এর উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন,  সাধারণত স্থানীয় জাতের আমন ধানের জীবনকাল ১৬০-১৭০ দিন এবং গাছ লম্বা হওয়ায় ঢলে পড়ে। র্দীঘ জীবনকাল বিশিষ্ট হওয়ায় উত্তরবঙ্গসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের কৃষকরা বছরে দু’টির বেশি ফসল চাষ করতে পারে না। তাই গবেষণার মাধ্যমে আমন মৌসুমের জন্য উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট বিনাধান-১৭ ধানের জাত আবিষ্কার করা হয়েছে।  বিনাধান-১৭ এর জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন এবং গড় ফলন ৬.৫টন/হেক্টর (বিঘা প্রতি ২৭ মণ)।

বিনাধান-১৭ এর উদ্ভাবক আরো বলেন, বিনাধান কাটার পর বিনা সরিষা আবাদ করে দুই ফসলি জমিতে তিনটি ফসল অনায়াসে আবাদ করা যায়।  এই ধানটি রোগ বালাই সহনশীল, এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার ও অর্ধেক পানি সাশ্রয়ী এবং খরা সহিষ্ণু হওয়ায় আগাম ও অধিক ফলনশীল বিনাধান-১৭ কে ‘গ্রিন সুপার রাইস’ বলা হয়। এই ধানটি ‘মেগা ভ্যারাইটি’ হবে বলেও জানান এই বিজ্ঞানী।

একই জমিতে বিনাধান-১৭ করে আরও কমপক্ষে তিন থেকে চারটি ফসল অতিরিক্ত করে বোরো আবাদ করা সম্ভব। এতে করে কৃষকদের আয় বাড়বে। ময়মনসিংহের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে এই ধানটি চাষ করা হয়েছে।  আগামী দিনে এই ধানের জাত সকল অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ময়মনসিংহের কৃষি বিভাগ। 

ময়মনসিংহ/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়