ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

উড়ন্ত ফানুসে অপরূপ বরগুনার রাতের আকাশ

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২১ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৩:১৫, ২১ অক্টোবর ২০২১
উড়ন্ত ফানুসে অপরূপ বরগুনার রাতের আকাশ

বুধবার রাতে বরগুনার আকাশে উড়েছিলো পাঁচ শতাধিক ফানুস। এইদিন ছিলো মহাওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা উৎসব। রাখাইনের এই মহোৎসবে ফানুস উড়িয়ে গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করেছেন তারা।

বুধবার (২০ অক্টোবর) রাতে বরগুনা সদরের ২টি ও তালতলীর উপজেলার ১২টি রাখাইন পল্লীর রাখাইনরা একযোগে পূর্ণিমা ভরা আকাশে পাঁচ শতাধিক ফানুস উড়িয়ে গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করেন। রাখাইনদের এই উৎসব চলবে তিন দিন। 

তিনদিনের এই আয়োজনে আরও থাকছে- ধর্মীয় গুরুদের খাবার দেওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা তৈরি, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, রথযাত্রা ও সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জন। এ উৎসব শেষ হবে আগামীকাল শুক্রবার। 

তালতলীর বৌদ্ধবিহার গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে সব বিহারগুলো। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে মঙ্গলরথ উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে শত শত ফানুস ওড়ানো হয় তালতলীর ১২টি পাড়ায়। আতশবাজির রঙিন ঝিলমিলিতে আলোকিত হয়ে ওঠে তালতলীর আকাশ। তার সঙ্গে উড়ন্ত ফানুসে আকাশ হয়ে ওঠে অপরুপ। রঙিন হয়ে ওঠে রাতের আকাশ। পরে রাখাইন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের আয়োজনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। প্রতিটি বাড়িতে তৈরি করা হয়েছে বাহারি রকমের পিঠা-পুলি।

বিহারের পুরোহিত মং ণঙ থাং (৭৬) বলেন, এ পূর্ণিমায় গৌতম বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে মাতৃদেবীকে অভিধর্ম দেশনার পর ভারতের সাংকাশ্য নগরে অবতরণ করেন। তিনি তখন মানব জাতির সুখ-শান্তি-কল্যাণে দিকে দিকে স্বধর্ম প্রচারের জন্য তার ভিক্ষু সংঘকে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে এই দিনেই তার তিন মাসের বর্ষাবাসের পরিসমাপ্তি ঘটে।

তিনি আরও বলেন, এই তিথিতে গৌতম বুদ্ধ ৬০ জন প্রশিক্ষিত শিষ্যকে ধর্ম প্রচারণার জন্য বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেন। তিনি তাদের বলেন, চরথু ভিকখবে চারিকং, বহুজন হিথায় বহুজন সুখায়। এর অর্থ- তোমরা বহুজনের হিতের জন্য বহুজনের সুখের জন্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়।

প্রবীণ রাখাইন উচাং মং (৭০) বলেন, এই পূর্নিমায় গৌতম বুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্ম প্রচার শুরু করেছেন। আষাঢ়ি পূর্ণিমাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শুরু হয়ে কার্তিকের এ পূর্ণিমাতে শেষ হয়। এ সময় বিহারগুলোতে ৩দিন গৌতম বুদ্ধের স্মরণে নানা ধর্মীয় কার্য সম্পাদন ও রাতে আকাশ আলোকিত করতে ফানুস উড়িয়ে থাকেন তারা। রাখাইন নর-নারীরা প্রতিদিন সকালে বুদ্ধ পূজার উপাচার হতে পরিস্কার পোশাকে মহাসমারোহে বিহারে গমন করে । 

আয়োজক কমিটির নেতা রাখাইন উচিং মং বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা।
আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বর্ষাব্রত পালন করেন। এই সময় তার বিহারে অবস্থান এবং জ্ঞানচর্চা করেন। এই সাধনার সময় নানা ধরনের ভুলভ্রান্তি হতে পারে। তাই এই ব্রত শেষে তারা আশ্বিনী পূর্ণিমায় প্রবারণা করে থাকেন। প্রবারণায় তারা জ্ঞাত বা অজ্ঞাত সকল ভুলের সংশোধনের জন্য প্রধান ভিক্ষুর কাছে আসেন। জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুরাও নবীনদের কাছে তাদের ভুলের কথা জানান। এজন্য একে বলা হয় ভিক্ষুদের আত্নসমর্পণ ও আত্মনিবেদনের অনুষ্ঠান। 

প্রবারণা পূর্ণিমার পরে কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান হয়। 

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেন বলেন, রাখাইনদের এই উৎসবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। রাখাইনদের এই আয়োজনে নিরাপত্তার জন্য সকল ধর্মের মানুষ এগিয়ে এসেছেন। তিনদিনব্যাপী এই উৎসবে মাস্ক পড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মানতেও সকলকে অনুরোধ করেন তিনি।

ইমরান হোসেন/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়