ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কিসে এবং কিভাবে কাটলো সাইফুলের জিহ্বা

সাভার প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৫, ২৪ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ২০:১৪, ২৪ অক্টোবর ২০২১
কিসে এবং কিভাবে কাটলো সাইফুলের জিহ্বা

ঢাকার ধামরাইয়ে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির জিহ্বা কাটা নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এলাকাবাসী বলছেন প্রেমিকা কামড়ে ছিড়ে নিয়েছেন সাইফুলের জিহ্বা। আবার পুলিশ বলছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়ে থাকতে পারে তার জিহ্বা। সাইফুলের পরিবারের দাবি পাওনা টাকা চাওয়ায় তাদের ছেলের জিহ্বা কেটে নিয়েছে শরিফুলের  নামের একই গ্রামের বাসিন্দা ও তার পরিবারের সদস্যরা।

সাভারের ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের ফরিঙ্গা গ্রামে গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাত ২টার দিকে সাইফুলের জিহ্বা কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা জানাজানি হলে পুরো এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম একই এলাকার মো. রহমত আলীর ছেলে।

আরো পড়ুন: প্রেমিকের জিহ্বা কর্তন: প্রেমিকাসহ তিন জনের জামিন

শনিবার (২৩ অক্টোবর) অভিযান চালিয়ে শারমিন আক্তার, শফিকুল ইসলাম, পানকা বেগম, ফারুক হোসেন ও সোরহাব হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। কিন্তু রোববার (২৪ অক্টোবর) ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গ্রেপ্তারকৃত ৫ আসামিকে হাজির করা হলে আদালত চারজনের জামিন মঞ্জুর করেন।   

জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম পেশায় নরসুন্দর। ফোনে মেয়েদের সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলাই ছিলো তার স্বাভাব। 

রোববার ফরিঙ্গা গ্রামে ওই তরুণীর প্রতিবেশী জহুরুল, আরিফ ও কয়েকজন গৃহবধূর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।  তারা জানান, তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছিলো শারমিন আক্তারের। সাত দিনের মাথায় সংসার ভেঙ্গে যাবার পর তিন বছর আগে গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরব যান শারমিন আক্তার। দুই মাস আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

আরো পড়ুন: ‘বিয়ে না করায়’ প্রেমিকের জিহ্বা কাটলো প্রেমিকা

তরুণীর ভাই ফারুকের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেশী জহুরুল ইসলাম বলেন, 'মানিকগঞ্জের ঘিওরে শারমিন আক্তারের বাবার বাড়ি। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে তারা নানা বাড়ি চলে আসে। এই বাড়িতে দুইটা ঘর। একটি তার মায়ের ও আরেকটি খালার। তবে খালা বাড়িতে থাকেন না। সেই ঘরেই থাকেন শারমিন আক্তার। শুক্রববার মধ্য রাতে শারমিন আক্তার বাথরুমে গেলে গেট খোলা পেয়ে শারমিন আক্তারের ঘরে ঢুকে পরেন সাইফুল ইসলা্ম। পরে শারমিন ঘরে ঢুকলে তাকে লাঞ্ছিতের চেষ্টা করেন সাইফুল ইসলাম। এ সময় জিহ্বা কামড়ে কেটে দেয় সে। পরে শারমিন আক্তারের মা-বাবা-ভাই বিষয়টি টের পেয়ে এগিয়ে আসলে সাইফুল জিহ্বা ফেলেই পালিয়ে যান।' 

শারমিনের সম্পর্কে জানতে চাইলে আরিফুল নামে এক প্রতিবেশী বলেন, 'তিনি তো বিদেশে থাকতেন। আর তার পরিবারের সবাই-ই ব্যস্ত থাকে। আশপাশের মানুষের সঙ্গে মিশে না তেমন। তাছাড়া তার কোনো খারাপ দিক দেখিনি আমরা।'

সাইফুল সম্পর্কে খোঁজ নিলে স্থানীয়রা জানান, নরসুন্দরের কাজ করা সাইফুলের সম্পর্কে এলাকাবাসীর কারো মতামতই ভালো না। আগে সৌদি আরবে বিল্ডিং নির্মানের কাজ করতো। সেখানে পায়ে ইট পড়ে পা খোঁড়া হয়ে যায়। নাপিত কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে সে সারাদিন ফোনে কথা বলে। খর্বাকৃতি ও এক পা খোঁড়া হলেও তার কথা বলার ধরণ সুন্দর। তার একটা ৬ বছরের ছেলে থাকলেও বাঁজে স্বভাবের কারণে কিছুদিন আগে সাইফুল ইসলামের বউ চলে গেছে।

 আনোয়ারা বেগম নামে এক গৃহবধূ বলেন, 'সাইফুলের স্বভাব আগে থেকেই খারাপ। ফোনে কথা বলে এলাকার মেয়েদের পেছনে পড়ে থাকতো সে সব সময়। এসব কারণে অনেকবার বকাঝকা করেছে অনেকে।' 

সুমন নামে আরেকজন বলেন, 'সুন্দর করে কথা বলে বলে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতো সাইফুল। ওই মেয়ের (শারমিন) সঙ্গেও এমন সম্পর্ক থাকতে পারে। আমরা শুনছি রাতে ওই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মেয়ের পরিবার তাকে ধরে জিহ্বা কেটে দেয়। পরে জিহ্বা রেখেই সেখান থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে আসে সে।' 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সারোয়ার হোসেন বলেন, 'শুক্রবার রাত ২টার দিকে ওই মেয়েসহ তার পরিবার আমার বাড়িতে এসেছিলো। আমাকে তারা জানায়, মাঝরাতে শারমিন আক্তারের ঘরে ঢুকে পড়েছিলো সাইফুল ইসলাম। পরে তাকে ধরে জিহ্বা কেটে দেয় তারা। এই ঘটনা শুনে আমি ওদেরকে বকাঝকা করি। পরেরদিন মেয়ে পক্ষ মামলা করতে গেছিলো। কিন্তু তাদেরকেই পরে আটক করা হয়েছে বলে শুনতে পেয়েছি।

 সাইফুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ছেলেটা তো নরসুন্দরের কাজ করে। স্বভাব তেমনই। তবে তাদের মধ্যে প্রেম ছিলো কি না বলতে পারবো না।’

এদিকে পাওনা টাকা চাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি ভুক্তভোগী নরসুন্দরের পরিবারের। ধামরাই থানায় লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীর বাবা রহমত আলী বলেন, ' পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে শুক্রবার রাতে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাইফুল ইসলামের জিহবা কেটে ফেলে শারমিন আক্তারের পরিবার। পরে সাইফুল ইসলামকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় শনিবার শারমিন আক্তার ও তার বাবা শফিকুলসহ স্ত্রী এবং ছেলেকে গ্রেপ্তারর করে পুলিশ। 

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, 'প্রাথমিকভাবে পাওনা টাকা নিয়েই এঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটি ভুক্তভোগীকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার আদালতে পাঠানো হয়।'

সাব্বির/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়