ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হতাশা নিয়ে উপকূলের জেলেদের সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ২৫ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৪:০৫, ২৫ অক্টোবর ২০২১
হতাশা নিয়ে উপকূলের জেলেদের সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি

সোমবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নদী ও সাগরে ইলিশ ধরায় সরকারের দেওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ফলে মধ্যরাতেই মাছ শিকারে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বরগুনা উপকূলের জেলেরা।

উপকূলের পাথরঘাটা উপজেলার মাছেরখাল এলাকা। সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের জেলেরা মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়ার জন্য প্রায় ৩ হাজার ট্রলার প্রস্তুত করছেন। তারা ট্রলারগুলোতে জাল-দড়ি গুছিয়ে বরফ উঠাচ্ছেন। 

এছাড়া গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের জন্য সোমবার সকাল থেকে প্রত্যেকটি ট্রলারে এক থেকে দেড় লাখ টাকার নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী কিনে মধ্যরাতের অপেক্ষা করছেন জেলেরা।

মাছেরখাল এলাকার এফবি নাঈম ট্রলারের মালিক ও মাঝি মিরাজ খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বেকার সময়ে অর্ধাহার-অনাহারে পরিবার নিয়ে দিন কাটিয়েছেন তিনিসহ ট্রলারের ১৮ জেলে ও তাদের পরিবার। প্রকৃত জেলে হওয়া সত্বেও তারা কেউ সরকারের কোনো সহায়তা পাননি।

তিনি আরো বলেন, গত দুই বছর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে খুব কম পরিমানে মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। ৪ অক্টোবর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবার আগে ছয়বার সাগরে যান। এতে খরচ হয়েছে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রত্যেকবারই ঘাটে ফিরে মাছ বিক্রি করেছি সর্বোচ্চ ৬০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ধার-দেনা করে এখন পথে বসতে হয়েছে আমাদের। একজন জেলেকেও বেতন দিতে পারিনি। অভাবের তাড়নায় হতাশা নিয়েই আজ মধ্যরাতে সাগরে মাছ ধরার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। এবারও যদি সাগরে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয় তাহলে ট্রলার বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।নোয়াখালীর হাতিয়ার এফ বি আউয়াল ট্রলারের মাঝি গোলাম হায়দার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ইলিশ বেশি ধরা পড়ত। কিন্তু এখন সাগরে ইলিশের পরিমান খুবই কম। গত এক বছরে সাগরে ৮-১০ দিন জাল ফেলেও একবারে ১ লাখ টাকার মাছ ধরতে পারেনি। মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা শেষ, আশায় বুক বেধেঁছি বেশি মাছ পাওয়ার।’

তিনি আরো বলেন, শুক্রবার (২২ অক্টোবর) নোয়াখালী থেকে পাথরঘাটা এসেছি। তিন দিন ধরে জাল-দড়ি গুছিয়ে নিচ্ছি। দুপুরের মধ্যেই শেষ হবে জাল-দড়ির কাজ। অভাবের তাড়নায় দিশেহারা আমরা সব জেলেরা। ২০ কেজি চাল সহায়তা পেয়েছি এই ২২ দিনে। শুধু চাল খেয়েতো আর দিন চলেনা। সন্তানদের লেখা-পড়ার খরচ চালাতেও পারছিনা।

তালতলীর এফ বি রিমা ট্রলারের জেলেরা রাইজিংবিডিকে জানান, ধার-দেনায় সংসার চলছে তাদের। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরের উপর নির্ভর করবে তাদের বেঁচে থাকা। যদি আশানুরুপ মাছ না পায় তবে, জেলা পেশার পরিবর্তন ছাড়া উপায় নেই। প্রকৃত জেলে হওয়া সত্ত্বেও তারা কেউই পায়নি সহায়তা।

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, শুধুমাত্র বরগুনা উপকূলের দেড় লাখ মানুষ জেলে পেশায় নিয়োজিত। অথচ সরকারের তালিকায় জেলে সংখ্যা ৩৭ হাজার ৭৪ জন। এক লাখেরও বেশি জেলে সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। 

বিগত বছরের নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের সহায়তা করতো ট্রলার মালিকরা। তবে, বছরের পর বছর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমান কমে যাচ্ছে। মারাত্মক লোকসানের মুখে ট্রলার মালিকরাও। তাই জেলেদের এই অভাবের সময়ে তাদের সহায়তা করতে পারছে না তারা। জেলে তালিকায় প্রকৃত জেলেদের স্থান দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব রাইজিংবিডিকে বলেন, জেলে তালিকা করার সময়ে অনেক জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে থাকে। তাই অনেক জেলেরা তালিকায় আসেনা। তবে, কয়েক বছর আগেও জেলে তালিকায় অন্য পেশার মানুষদের থাকার অভিযোগ ছিলো। সেসব নাম বাদ দিয়ে এখন প্রতি বছরই তালিকায় প্রকৃত জেলেদের নাম নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, জেলেদের শুধুমাত্র ২০ কেজি চাল সহায়তায় অনেকটা কষ্ট হয় এটা ভেবেই আগামী সহায়তার সময়ে জেলেদের নগদ টাকা দেয়ার ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।মৎস্য কর্মকর্তা আরও জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সমুদ্রে আমাদের নৌ সীমায় পাশ্ববর্তী দেশেরে জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিলো। তাই কেউ অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। এজন্য আশা করা যাচ্ছে এবার প্রচুর মাছ ধরা পড়বে জেলেদের জালে।

চলতি নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে বরগুনায় নদী ও সাগরের বিভিন্ন এলাকায় ৩২২টি অভিযান করেছে মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রশাসন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৮ জেলে। জাল জব্দ করেছে প্রায় সাড়ে চার লাখ মিটার।

ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়