ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ইলিশ ধরা শুরু
ঝালকাঠি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ইলিশ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। নদী তীরবর্তী জেলে পল্লীতে মাছ ধরার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকাল থেকে নদীতে জাল ফেলে মাছ সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন জেলেরা। মাছ বিক্রি করে হাতে নগদ টাকা পাবে তাই জেলে পরিবারে যেন বইতে শুরু করেছে ঈদের আনন্দ।
জেলে পল্লীতে সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেদের কেউ পুরাতন জাল মেরামত করছেন, কেউ নতুন জাল বুনছেন এবং কেউ মাছ ধরার নৌকা/ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলে পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরাও মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকা জেলেদের নানাভাবে সহায়তা করতে করছেন।
নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলেদের ২০ কেজি করে চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে দিয়েছে। জেলে পরিবারের জন্য এ সহায়তা ছিল অপ্রতুল।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রত্যেক জেলের মাথার উপর এনজিও অথবা দাদন (সুদ) ব্যবসায়ীদের ঋণের কিস্তি ঝুলছে। অধিকাংশ জেলেই তাদের সঞ্চয় ভেঙে নিষেধাজ্ঞার দিনগুলো কোনো না কোনোভাবে পার করছেন।
জেলে নবদীপ মালো জানান, জেলেদের মাছ ছাড়া আর কোনো উপার্জন নেই। তাই অবরোধের আগে যা সঞ্চয় ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। আবরোধের পর ইলিশ না পেলে দুর্দশা আরও বাড়বে বলে তিনি জানান।
জেলে মুকুল মালো জানান, সরকারের দেওয়া ২০ কেজি চালে তাদের সংসার চলে না। তিনি খাদ্য সহায়তা বাড়াবার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান।
ঝালকাঠির ১৭ কিলোমিটার প্রবাহমান সুগন্ধা এবং বিষখালীর ৩০ কিলোমিটার মিঠা পানিতে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশের আগমন ঘটে। সুগন্ধা নদীর বড় অংশটি হচ্ছে নলছিটি উপজেলার ভেতরে। ঝালকাঠির গাবখান নদীর মোহনা থেকে শুরু হয় ইলিশ ধরা। শেষ হয় বরিশালের কীর্তণখোলার পশ্চিমাংশে গিয়ে।
সুগন্ধার দীর্ঘ এই ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, কলেজ খেয়াঘাট, নলছিটির বারইকরণ, সরই, মাটিভাঙা, বহরমপুর, চরবহরমপুর, ষাইটপাকিয়া ফেরিঘাট, নলছিটি লঞ্চঘাট, পুরানবাজার, সুজাবাদ, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সারদল রয়েছে।
এছাড়া ৪০কিলোমিটার প্রবাহমান বিষখালী নদীর দেউরী, ভেরনবাড়িয়া, নলবুনিয়া, ভবানীপুর, বাদুরতলা, চল্লিশ কাহনিয়া, পালটসহ ২০টি এলাকায় শত শত জেলে জাল ফেলে ইলিশ শিকার শুরু করেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুম দুটি। একটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এবং আরেকটি জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। সরকার ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ রাখে। পাশাপাশি ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। এসব কারণে ইলিশ তার পরিপূর্ণ জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারে।
অলোক/মাসুদ
আরো পড়ুন