ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ট্রলারভর্তি ইলিশের আশায় সাগরে জেলেরা 

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ২৬ অক্টোবর ২০২১  
ট্রলারভর্তি ইলিশের আশায় সাগরে জেলেরা 

ইলিশ ধরার ওপর সরকারের দেওয়া টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সোমবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরতে গেছে কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা। দিনে এনে দিনে খাওয়া জেলে পরিবারগুলো এতদিন কষ্টে দিনাতিপাত করলেও এবার ভালো কিছুর আশায় মুখিয়ে আছে। বেশি মাছ নিয়ে কূলে ভিড়বে ট্রলার, অভাব দূর হবে, সুখে দিন কাটবে, সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছে পরিবারের সদস্যরা।

গত রোববার (২৪ অক্টোবর) থেকে কক্সবাজার ফিশারী ঘাটের প্রত্যেকটি ট্রলার বরফ, তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী কিনেছে। এসব পণ্য বাবদ ২ থেকে ৩ লাখ টাকা খরচ করে গভীর বঙ্গোপসাগরে গেছে মাছ শিকারে।

এর আগে টানা ২২ দিন তারা অভাব-দৈন্যদশার মধ্যে ছিলো্। কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ পরিবার মাছ ধরে সাগরের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে জীবনযাপন করে থাকে। টানা ১০-১৫ দিন সাগরে ভেসে ভেসে যা পায়, তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলে। এভাবে দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে সারা বছর পার করতে হয় তাদের। সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে কর্মহীন হয়ে পড়ে কক্সবাজারের লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। বিশেষ করে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়ে উপকূলের জেলেরা।

কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়ার জেলে কামাল মাঝির স্ত্রী ছমুদা বেগম বলেন, ‘এতদিন টাকা পয়সা নিয়ে কষ্টে ছিলাম। তারপরও ধৈর্য ধরেছিলাম এবং সাগর খুলে দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। এবার আল্লাহর উপর ভরসা করে স্বামী সাগরে গেছে। দেখি কী হয়, তবে আশা রাখছি- এবার বেশি মাছ নিয়ে স্বামী ফিরবে আসবে।’

একই এলাকার আরেক জেলের স্ত্রী সাহেরা খাতুন বলেন, 'আমার স্বামী ফেরদৌস ও ছেলে ইমাম হোসেন দুজনই ট্রলারে মাছ ধরে। স্বামী অসুস্থ ছিলো। সাগর বন্ধ থাকায় ছেলে রিকশা চালিয়ে সংসার চালিয়েছে। এখন সাগরে ট্রলার যেতে পারছে বলে তারা বাবা-ছেলে দুজনই সাগরে গেছে। অনেক ইলিশ নিয়ে তারা ফিরবে সেই আশায় আছি।’

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক রাইজিংবিডিকে বলেন, 'সরকারের দেওয়া ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষে কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা সাগরে গেছে। শহরের উপকূলীয় ঘাটগুলো থেকে তিন শতাধিক ট্রলার মাছ শিকারে গেছে।’  

সরকার প্রদত্ত প্রান্তিক জেলেদের অনেকেই সরকারি সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ করেন। তাদের জন্য বরাদ্দ সরকারি সহায়তা তারা চোখেও দেখেনি এবং কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে জানান। 

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, 'একদম হতদরিদ্র প্রান্তিক জেলেদের জন্য সরকারি সহায়তার বরাদ্দ রয়েছে। যারা এই রকম অভিযোগ তোলেন তারা সাবলম্বী জেলে। হতরিদ্রদের না দিয়ে আমরা সাবলম্বীদের দিতে পারছি না। তাছাড়াও কক্সবাজারের বেশিরভাগ জেলে ভালো বেতনে চাকরি করেন। তাদের তো সরকার বরাদ্দ দেবে না।’ 

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার জেলায় ৬৪ হাজার ৩০২ জন তালিকাভুক্ত জেলের মধ্যে ২২ হাজার প্রান্তিক জেলেকে সহায়তার জন্য বরাদ্দ পেয়েছি। সুতরাং সকলকে দেওয়া সম্ভব হয়নি।’ 

খালেকুজ্জামান আরও বলেন, 'কক্সবাজার জেলায় ৫ হাজার ৫৪৯টি ট্রলার রয়েছে। আমরা ধরে নিচ্ছি ওখান থেকে ৮০ শতাংশ ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে চলে গেছে। এছাড়াও রেজুখাল থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ দৈনিক মাছ ধরার নৌকাগুলো সাগরে চলে গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর তারা মাছ পাওয়ার আশা নিয়ে সাগরে গেছে। আশা করছি, বেশি বেশি মাছ পেয়ে কূলে ফিরবে তারা।’ 

তারেক/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ