ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শিয়াল আতঙ্কে গ্রাম পাহারা 

গাইবান্ধা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৮, ২৮ অক্টোবর ২০২১  
শিয়াল আতঙ্কে গ্রাম পাহারা 

শিয়ালের কামড়ের গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার তালুকজামিরা গ্রামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মানুষ দেখলেই আক্রমণ চালাচ্ছে শিয়াল। কামড়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে শরীরের মাংস। থাবায় ক্ষত-বিক্ষত করছে শরীর। এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ওই এলাকায়। আক্রমণ থেকে বাঁচতে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সনকালে মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এ বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি জানান, মাস দেড়েক আগে মাঠে ঘাস কাটতে যান পলাশবাড়ি উপজেলার তালুকজামিরা গ্রামের কৃষক স্থানীয় মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু। হঠাৎ করে তার উপর লাফিয়ে পড়ে শিয়াল। হাতের কাস্তে দিয়ে আঘাত করেও রক্ষা পাননি তিনি। তার নাক-মুখ রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায় শিয়ালটি। পরে তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় জেলা সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৮ দিন পর মারা যান রুকু। এর মধ্যে আরও কয়েকটি আক্রমণে কয়েকজন আহত হয়েছেন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে এলাকার নারী পুরুষ  শিশুরা এখন আর একা ঘরের বাহিরে যেতে পারেন না। মাঠে ময়দানে খেলাও বন্ধ। গ্রামের শিশুরা খেলতে গেলেও লাঠি নিয়ে মাঠে বা রাস্তায় বের হয়।

ওই গ্রামের ফরিদ উদ্দিন জানান,গত রোববার সকালে দাদার বাড়ি থেকে পাশেই নিজ বাড়িতে ফেরার পথে হঠাৎ দশ বছরের শিশু রাব্বীর ওপর আক্রমণ করে কয়েকটি শিয়াল। কামড়ে ও আঁচড়ে দেয় তার বুক, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ। শিশুটির চিৎকার শুনে তার মা এগিয়ে আসলে তার উপরেও হামলে পড়ে শিয়াল। শেষ পর্যন্ত আরেক প্রতিবেশীর লাঠির তাড়া খেয়ে পালিয়ে যায় শিয়াল।

গৃহিনী সুফিয়া খাতুন জানান, ছাগল নিয়ে তাকে মাঠে যেতে হয় প্রতিদিন। ইদানিং হাতে লাঠি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে মাঠে কাজ করেন তিনি। এক হাতে লাঠি অন্য দিকে ছাগল নিয়ে সতর্ক থাকা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। একটু দূরে গেলেই ছাগলের ওপর শিয়ালের দল ঝাপিয়ে পড়ে। অবশেষে দল বেধে লাঠি নিয়ে শিয়াল তাড়াতে হয়। আর রাত হলেতো কথাই নেই। শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাকে ভয়ে ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন।

ময়না বেগম বলেন, ‘আমরা শিয়ালের ভয়ে সন্ধ‌্যার আগেই বাহিরের কাজ শেষ করি। সন্ধ‌্যার পর আর ঘরের বাইরে বের হওয়া যায় না।’

নবির হোসেন বলেন, ‘সন্ধ‌্যার পর চায়ের দোকানে আর টেলিভিশন দেখতে যাওয়া যায় না। সেখানে গেলেও লাঠি হাতে খুব সতর্ক অবস্থায় যেতে হয়। আর শিশুদের কথাতো বলাই যায় না। এখন সবাইকে লাঠি হাতে গ্রাম পাহারা দিতে হয়।’

এব্যাপারে হরিনাবাড়ি পুলিশ পুলিশ তদন্তকারী ফাড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ রাকিব হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। শিয়ালের আক্রমণ থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে সে বিষয়ে তিনি গ্রামের মানুষের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পলাশবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, শিয়াল খাবার খোঁজে বের হয়ে মানুষকে আক্রমণ করে। এ অবস্থায় তিনি ওই গ্রামের মানুষকে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছেন।

দয়াল/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়