সোনালী ধানে কুয়াশার পরশ
তারেকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম
কুয়াশার চাদরে ঢাকা পরেছে গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ
শীতের আগমনী বার্তায় ভোরের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ ও লোকালয়। উদিত সূর্যের কিরণে দূর্বা ঘাসে কিংবা পাকা ধানের সোনালী ডগায় মুক্তার মতো আলো ছড়িয়ে ভোরের শিশির জানান দিচ্ছে, শীত আসছে প্রকৃতিতে।
ভোরবেলায় কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে হিম বাতাস অনুভূত হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও কার্তিকের শেষ বেলায় অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে কক্সবাজার জেলায় শীতের আগমন ঘটে।
রোববার (৭ নভেম্বর) ভোরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে গ্রামের রাস্তা-ঘাট। পাকা ধানের ডগায় সূর্যের আলো পড়ে কাচের মতো চিকচিক করছে। গ্রামের জেলে ও চাষিরা ভোরে নিজ নিজ গন্তব্যে বের হয়েছেন হালকা গরম কাপড় গায়ে মুড়িয়ে। আর ঘাসের ওপর ভোরের সূর্য হালকা লালচে রঙয়ের ঝিলিক দিচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ‘এ বছর একটু আগেই আগাম শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাতের শেষভাগে হালকা বৃষ্টির মত টিপটিপ করে কুয়াশা ঝড়তে থাকে। বিশেষ করে মাঠে ঘাসের ডগায় ও ধানের শীষে জমতে দেখা যায় বিন্দু বিন্দু কুয়াশা। গ্রামগুলোতে পুরোনো কাঁথা নতুন করে সেলাই করে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা। বাড়ির পাশে গাছের নিচে বসে রঙ-বেরঙের সুতো দিয়ে তারা তৈরি করছেন কাঁথা।’
টেকনাফ বাহারছড়ার চাষি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘গত কয়েকদিন থেকে শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশ সৃষ্টি হয়।’
সবজি চাষি আবুল কাসেম বলেন, ‘শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, গাজর, টমেটো চাষ করেছি। শীত আরেকটু পড়লে সবজি বাজারে তুলবো। এরই মধ্যে কিছু সবজি চাষি নতুন সবজি বাজারে তুলতে শুরু করেছেন।’
বিকেলে শামলাপুর বাজারের জিলাপী বিক্রেতা শামশুল আলম জিলাপীর সরঞ্জাম নিয়ে বসে গেছেন হাটের এক কোনায়। তিনি বলেন, ‘প্রতি শীত মৌসুমে আমি জিলাপী বানাই। এখন গ্রামে শীত পড়তেছে। জিলাপীও কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা চাল, গুঁড়, তেল ইত্যাদি কাঁচামালে খরচ হয়। আর দৈনিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা বিক্রয় হয়। পুরো শীত মৌসুমে বিক্রি বেড়ে দৈনিক চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকাও হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো শীতের মৌসুমে জিলাপী বানানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। জিলাপী বিক্রয় করে কিছু টাকা উপার্জন করার আশা আছে। দেখা যাক, আল্লাহ্ ভরসা।’
শুধু জিলাপী নয়, গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে চিতই আর ভাপা পিঠা তৈরি করছে কেউ কেউ। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আস্তে আস্তে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। দিনের বেলায় একটু গরম থাকলেও তা সন্ধ্যার পর পরই ঠাণ্ডা পরতে শুরু করে।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মুজিবুল হক জানান, শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা অনুযায়ী বলা যায় বর্তমান আবহাওয়া মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। বেশি গরমও নয় আবার বেশি ঠাণ্ডাও নয়। তবে তাপমাত্রা কমে আসতে শুরু করেছে। অর্থাৎ শীতের আগমন ঘটছে।
কক্সবাজার/বুলাকী
আরো পড়ুন