ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পিঠা বিক্রি করে চলে খাদিজার জীবন

দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২৫ নভেম্বর ২০২১  
পিঠা বিক্রি করে চলে খাদিজার জীবন

সাধারণত শীত এলেই সামনে আসে পিঠাপুলির কথা। এক সময় বাড়িতে বাড়িতে চলতো পিঠা বানানোর উৎসব। কিন্তু গ্রাম বাংলার চিরচারিত ওই রীতি এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। তারপরও শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পিঠা বানানোর অনুষঙ্গ কিন্তু থেমে নেই এখনো। শহর বা গ্রামের অলিগলিতে জমে ওঠে মৌসুমি পিঠার দোকান। সেখানে পাওয়া যায় হরেক রকমের পিঠা। এই পিঠা কারো বাড়তি আয়ের উৎস, আবার কারো বা জীবিকার প্রধান মাধ্যম।

হিলির গোডাউন মোড়ে তেমনই একটি পিঠার দোকান ষাটোর্ধ্ব খদেজা বেওয়ার। মাটির চুলায় ভাপা ও চিতা পিঠা তৈরি করে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকেন তিনি। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ওই স্থানে বসেন তিনি। পিঠা বিক্রি করে শীতের আনন্দ নিতে আসা পিঠা প্রেমীদের মনের খোরাক মেটান খাদেজা বেওয়া।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) রাতে হিলির গোডাউন মোড়ে কথা হয় খাদেজা বেওয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি হিলির কালিগঞ্জ এলাকায়। ৩০ বছর আগে স্বামী চাঁন মিয়া মারা গেছেন। জীবিকার তাগিদে তাই শীতকালে পিঠা বিক্রি করে আর গরমকালে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো মতে জীবন চালাই আমি।’

তিনি আরো বলেন, ‘শীতকালে প্রচুর মানুষ পিঠা খেতে অসেন। অনেকে বাড়ির সদস্যদের জন্যও পিঠা কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকার পিঠা বিক্রি করে লাভ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ভাপা ও চিতই পিঠা তৈরি করে বিক্রি করি। সঙ্গে থাকে গুড় ও বিভিন্ন চাটনি। দেড় থেকে দুই কেজি চালের পিঠা তৈরি করে, তা বিক্রি করি পাঁচ টাকা পিসে।’

বৃদ্ধা খদেজা বেওয়া বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর একমাত্র মেয়েকে নিয়েই থাকতাম। অনেক কষ্টে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মাথা গোজার ঠাঁই নেই। অন্যের বাড়িতে ভাড়া থেকে কোনো মতে জীবন কাটাচ্ছি। ঘরে না খেয়ে থাকলেও দেখার কেউ নাই। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় দোকান নিয়ে বসেছি।’

খাদিজা বেওয়ার কাছ থেকে জানা যায়, তার বিধবা ভাতার কার্ড রয়েছে, তবে ভূমিহীন হিসেবে এখনও সরকারি ঘর বরাদ্দ পাননি। দুই বছর আগে একটি ঘরের আশায় চেয়ারম্যানদের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। হয় তো একটি সরকারি ঘর পেলে নিঃসঙ্গ জীবনে একটু স্বস্তি পেতেন এই খদেজা বেওয়া।

গোডাউন মোড়ে পানের দোকানদার রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওই বৃদ্ধা নারীকে শীতকালে এখানে পিঠা বিক্রি করতে দেখছি। সরকার যদি এই অসহায় মানুষটিকে একটি ঘর দিত তাহলে তার অনেক উপকার হতো।’

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘খদেজা বেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে তার আইডি কার্ড দেখবো। যদি ‘ক' শ্রেণিতে তার নাম থাকে তাহলে তার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করবো। আর যদি নাম না থাকে তাহলে আগামীতে অবশ্যই তার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’

মোসলেম/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়