ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনে ভোগান্তি

রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১০, ২৯ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ২২:৫২, ২৯ নভেম্বর ২০২১
ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনে ভোগান্তি

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ তুলতে গিয়ে নানা ধরণের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করে জেলা ও উপজেলায় অনুমোদনে কারণে এসব জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সবগুলোতে একই সমস্যা। নতুন একটি জন্ম সনদ পেতে এক সপ্তাহ থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আবার জন্ম নিবন্ধন পাওয়ার পর অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের ভুল রয়েছে। সেই ভুল সংশোধন করতে গেলে আরও সময় লেগে যায়।

সরেজমিনে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনও ব্যক্তির মৃত্যু সনদ তৈরি করতে গেলেও জন্ম সনদের প্রয়োজন হয়। জন্ম সনদ না থাকলে নতুন করে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এগুলো পেতে দিনের পর দিন এমনকি মাসের পর মাসও লেগে যায়। ভুক্তভোগীরা সবাই ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন পদ্ধতি ও ভোগান্তির দ্রুত সমাধান চান।

কালীগঞ্জ পৌর এলাদার ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার (৫১) পেশায় ঝালমুড়ি বিক্রেতা। জানান, তার ছেলে-মেয়ে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন থাকলেও তা ডিজিটাল নয়। তাই কালীগঞ্জ পৌরসভায় ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন করতে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন সন্তানের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের আগে বাবা-মায়েরটা লাগবে। পরে বাবা-মায়ের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।

নিয়মানুযায়ী গত ১৭ অক্টোবর পৌরসভায় গিয়ে নিজের ও তার স্ত্রীর ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করেন। পরে জানতে পারেন ওই আবেদনের কপি নিয়ে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক কাছ থেকে অনুমোদন আনলে পরে পৌরসভা থেকে প্রিন্ট করে দেওয়া হবে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষটি পড়ে যান বিপদে। এমনিতেই তার কাছে অচেনা জেলা শহর, তার মধ্যে আবার জেলায় যাওয়া মানে একদিনের রোজগার নষ্ট। তারপরও সন্তানদের কথা চিন্তা করে গত ২৫ অক্টোবর যান। জমা দেওয়ার পর ওখানকার লোকজন জানায় ১ সপ্তাহ পর অনুমোদন পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই অনুমোদন পাওয়া যায় ৭ নভেম্বর।

স্বামী-স্ত্রী একসাথে আবেদন করলেও অনুমোদন আসে শুধু নিজেরটা। পরে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তারা আজ না কাল, কাল না পরশু করে সময় নষ্ট করতে থাকেন। অবশেষে ২৯ নভেম্বর তিনি তার স্ত্রীর আবেদনের অনুমোদন পান। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে নিবন্ধনের এই পদ্ধতিকে তিনি ভোগান্তি বলে মনে করছেন। তার ভাষায় সাধারণ মানুষের জন্য আরও সহজ পদ্ধতি চালু করা উচিত।

জামলপুর ইউনিয়নের কলাপাটুয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরুল ইসলাম (৬০) জানান, তার মেয়ে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার শিল্পাঞ্চল এলাকার একটি কলেজে এইচএসসি ২য় বর্ষে পড়ছে। কলেজ থেকে মেয়ের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন চেয়েছে, তা করতে গিয়ে হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তার ও তার স্ত্রীর নিবন্ধনের আবেদন করে এক মাস ঘুরে তা হাতে পাওয়ার পর দেখা যায় স্ত্রীর নামের বানানে ভুল। পরে তা নিয়ে আরও একমাস ঘুরতে হয়। দ্রুত এই পদ্ধতির উন্নতি ও সমাধান চান তিনি।

এ বিষয়ে তুমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শিখা বেগম জানান, অনেক সময় মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে উপজেলায় গিয়ে কাজের খোঁজখবর নেন। তবে কালীগঞ্জ পৌরসভা বাদে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কাজ একজন ব্যক্তি করছেন। তাই সময় লাগছে।

তিনি আরও জানান, সারাদেশে একসাথে এই কার্যক্রম চলমান থাকায় সার্ভারের সমস্যার কারণেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

কালীগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশরাফুজ্জামান জানান, বিগত দিনে মেয়র, কাউন্সিলরদের বেলায় এই ধরনের নিয়ম চালু ছিল না। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল পদ্ধতি তিনি স্বাগত জানান। তবে সদ্য নির্বাচিত হয়ে পৌরসভায় সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে গিয়ে নিজেরাও চাপের মুখে আছেন। সাধারণ মানুষ মনে করেছেন ভোট দিয়ে মেয়র-কাউন্সিলর বানিয়ে তারা এখন ভোগান্তিতে পড়েছেন। সরকারি নিয়মের বাহিরে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে না পারায় অতৃপ্তিতে ভুগছেন বলেও জানান ওই কাউন্সিলর। সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তির দ্রুত সমাধান চান তিনি।

বাহাদুরসাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন জানান, সারাদেশে একযোগে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরির কারণে সমস্যা হচ্ছে। উপজেলার আওতায় থাকায় সময় ও ঝামেলা বেশি হচ্ছে। তবে নিবন্ধন তৈরির প্রক্রিয়াটা ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে থাকলে জনগণের ভোগান্তি অনেক কম হতো। অচিরেই সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তি ও সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কালীগঞ্জ পৌর মেয়র এস এম রবীন হোসেন বলেন, আসলে এটা শুধু কালীগঞ্জ পৌরসভায় না। সারাদেশের যে সকল পৌরসভায় ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের আবেদন হচ্ছে তার অনুমোদনই জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের কাছ থেকে আনতে হয়। সারাদেশে একযোগে কাজ হওয়ায় সার্ভার সমস্যায় সাধারণ মানুষের জন্ম নিবন্ধনে ভোগান্তি ও সময় বেশি লাগছে। সমস্যা সমাধানে আলোচনা চলছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে সেবা প্রত্যাশীদের কিছুটা হলেও ভোগান্তি কমবে এবং সময় নষ্ট কম হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করার বিধান থাকলে মানুষ তা করে না। সময় মতো নিবন্ধন না করার কারণেই এ সমস্যা বাড়ছে। সময় মতো নিবন্ধন করা হলে এ সমস্যা অনেক কমে যাবে। জনসচেতনতার মাধ্যমে এ ভোগান্তি কমানো সম্ভব।

কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়