ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নামের মিল থাকায় কারাগারে রাকিব

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ১ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৬:২৩, ১ ডিসেম্বর ২০২১
নামের মিল থাকায় কারাগারে রাকিব

মাদক মামলার আসামির সঙ্গে নামের মিল। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা ভিন্ন। নামের মিল থাকার খেসারত দিচ্ছেন রাকিব (২৫)। পুলিশের ভুলে বিনা কারণে গত ২২ দিন ধরে জেল হাজতে আটক আছেন তিনি। এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রাকিবের বাবা-মা।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের রাথুর গ্রামে বিনা কারণে কারাগারে আটক রাকিবের বাড়ি।

বুধবার (১ ডিসেম্বর) রাকিবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়ি খা খা করছে। রাকিবের মা রাহিমা বেগম বারবার ছেলের কথা বলে মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মিথ্যা মামলায় কারাগারে। আমার ছেলে গ্রামের কারো ক্ষতি করে নাই। তবে কেন আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলো? আমার ছেলের মুক্তি চাই।’

রাকিবের বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধি আক্তার হোসেন বলেন, ‘রাকিব আমার একমাত্র ছেলে। নিজের সর্বস্ব দিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছি। এখন সে লেখাপড়ার পাশাপাশি পিকআপ দিয়ে পল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা করে।’

মামলার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ২৭ আগস্ট গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ২০৩ পিস বিয়ারসহ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের সাইজউদ্দিনের ছেলে শহিদুল্লাহকে (৩২) আটক করে। পরে আসামি শহিদুল্লাহর জবানবন্দি অনুযায়ী ২৮ আগস্ট ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ওবায়দুর রহমান বাদি হয়ে শহিদুল্লাহ, তার ছোট ভাই আশরাফুল, রাকিব ও রুবেলের নাম উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মাদক মামলা (নম্বর ৯) করেন। তবে মামলায় রাকিব ও রুবেলের বাবার নাম অজ্ঞাত ছিল।’

ওই মামলায় ডিবি পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাই করার জন্য কালীগঞ্জ থানায় একটি অনুসন্ধান স্লিপ পাঠায়। পরে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের অনুসন্ধান স্লিপ নিয়ে উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল তালুকদার তদন্ত করে রাকিবের বাবার নাম আক্তার উল্লেখ করে পাঠিয়ে দেন এবং মামলার আসামি রুবেলকে অব্যাহতি দেন।

তিনি আরো বলেন, ‘নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে আমরা জানতে পারি আমার ছেলে ওই মামলার আসামি। পরে সরল মনে ছেলেকে নিয়ে আমরা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যাই। কিন্তু আদালত আমার ছেলেকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সে গত ২২ দিন ধরে জেলে আছে। আমি আমার নির্দোষ ছেলের মুক্তি চাই।’

মামলার ২ নম্বর আসামি রাথুরা গ্রামের সাইজউদ্দিনের ছেলে মো. আশরাফুল মুঠো ফোনে বলেন, ‘ওইদিন আমাদের সঙ্গে আক্তার হোসেন কাকার ছেলে রাকিব ছিল না। আমাদের সঙ্গে যে রাকিব জড়িত ছিল সে আমার বন্ধু, তার বাড়ি পাড়াবর্তা (নাওটান) গ্রামে এবং বাবার নাম তাইজউদ্দিন তাজু।’    

গলান বাজারের ব্যবসায়ী ও রাথুরা গ্রামের বাসিন্দা মহসিন শেখ জানান, ‘কারাগারে আটক রাকিব মাদক ব্যবসা তো দূরের কথা মাদক সেবনও করেতেন না। তিনি পিকআপ দিয়ে ঢাকার উত্তরা এলাকায় পল্ট্রি মুরগির ব্যবসা করেন।’

রাথুরা দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল হোসেন বলেন, ‘রাকিব মাদক ব্যবসায় জড়িত এই ধরণের কথা কখনো শুনিনি। তিনি খুবই ভদ্র ও শান্ত ছেলে।’

কালীগঞ্জ থানার পক্ষে আসামিদের নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাই করা পুলিশ কর্মকর্তা মুকুল তালুকদার বর্তমানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কোনাবাড়ী থানায় কর্মরত আছেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এক মাস কালীগঞ্জ থানার উলুখোলা ফাঁড়ির অধীনে কাজ করেছি। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাম ঠিকানা পাঠিয়েছি।’

মামলার বাদী গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি মামলায় ৪ জনের নাম দিলেও শহিদুল্লাহ এবং আশরাফুলের বাবার নাম উল্লেখ করেছি। তবে রাকিব ও রুবেলের বাবার নাম জানতে না পারায় অজ্ঞাত রেখেছি। পরে ওই মামলা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বদিউজ্জামান তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বদিউজ্জামান বলেন, ‘এখানে আমার কিছু করার নেই। আমরা ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান স্লিপ পাঠিয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় পূর্ণাঙ্গ নাম নিয়েছি। রুবেল নামে এক আসামির সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে অব্যাহতি দিয়ে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি।’

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আসলে যাকে তদন্ত করতে পাঠাই, সে তদন্ত করে দিলে আমি শুধু স্বাক্ষর করি। আমার পক্ষে যাচাই-বাছাই করার কোন সুযোগ নেই। তবে এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা দুঃখজনক।’

গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার্স ইনচার্জ মো. আমির হোসেন বলেন, ‘আমরা অনুসন্ধান স্লিপের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। অজ্ঞাত হিসেবে নাম দেওয়ার পর কালীগঞ্জ থানা পুলিশ বাবার নাম উল্লেখ্য করে আমাদের প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে আমার সন্দেহ হলে আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে ফোনে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি ঠিক আছে কিনা তা চূড়ান্ত করতে বলি। পরে তিনি ফোনে ওভার কনফার্ম করেন। তবে এই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে এটা অনাকাঙ্খিত।’      

রফিক/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়