ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণ দিলেন মনিরুল 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ৪ ডিসেম্বর ২০২১  
যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণ দিলেন মনিরুল 

নিহত ট্রাফিক কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম (৪৫)। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় প্রতিদিনের মতো দায়িত্ব পালন শুরু করেন। আরও তিনজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তার ডিউটি নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলা রেলক্রসিং এলাকায়। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ট্রেন আসার মুহূর্তে রেললাইনে উঠে যাওয়া যানবাহনের যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন এই ট্রাফিক কনস্টেবল। 

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ট্রেনের ধাক্কায় প্রথমে প্রাণ হারান কনস্টেবল মনিরুল। এরপর মারা যান সিএনজি অটোরিকশার দুই যাত্রী। 

খুলশী ঝাউতলা রেল ক্রসিং এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে শহর অভিমুখী ট্রেন আসার মুহূর্তে একে খান জিইসি অভিমুখী অংশে লোহার পাইপের প্রতিবন্ধক ফেলে সড়ক বন্ধ করে গেইট ম্যান। কিন্তু বিপরীত পাশের জিইসি থেকে এ কে খান অভিমুখী সড়কে কোনো প্রতিবন্ধক না ফেলায় এই প্রান্তে রেললাইনের উপর উঠে যায় দুটি সিএনজি অটোরিকশা এবং একটি বাস। এই সময় ট্রেন চলে আসতে থাকলে ট্রাফিক কনস্টেবল মনিরুল দ্রুত ছুটে এসে রেললাইন থেকে যানবাহন এবং যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহূর্তে ছুটে আসে ট্রেন। ট্রেনের প্রথম আঘাতে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় মনিরুলের। গুরুতর আহত হয় কমপক্ষে ১০ জন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যায় দুই জন। এই ঘটনায় ট্রাফিক কনস্টেবল মনিরুলসহ তিন জনের মৃত্যু ঘটেছে।

মনিরুলের সঙ্গে ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাফিক পুলিশের অপর সদস্য কনস্টেবল মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি সড়কের এক প্রান্তে এবং মনির ভাই অপর প্রান্তে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মনিরুল যে প্রান্তে ছিলেন, সেই প্রান্তে বাস, সিএনজি অটোরিকশা  রেললাইনের উপর উঠে পড়ে। মনিরুল ভাই দ্রুত মানুষজনকে নিরাপদে আনতে ছুটে যান। কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজের জীবন দিয়ে দেন। চোখের সামনে ট্রেনের ধাক্কায় তার মৃত্যু হলো।’

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম ১৯৯৬ সালের ৮ জুন বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১৩ সালের ১৭ জুন থেকে তিনি চট্টগ্রাম ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০১৯ সালের ৮ জুন যোগ দেন ট্রাফিক উত্তর বিভাগে। সৎ এবং কর্মজীবন দক্ষ ও চৌকস পুলিশ সদস্য হিসেবে মনিরুল চাকরিজীবনে ৪৯টি পুরস্কার লাভ করেছেন। তার চাকরিজীবনে কোনো শাস্তি বা শো-কজ নোটিশ পাওয়ারও নজির নেই। 

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার খোয়াজপুর গ্রামে মনিরুলের বাড়ি। তার বাবার নাম কে বি এম ফয়েজ। চাকরির কারণে তিনি চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দ্রনগর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।

মনিরুলের বড় কন্যা মাহমুদা লিমা বলেন, ‘মানুষের প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবন দিয়ে দিলেন আমার বাবা। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমাদের দেখার, ভালোবাসার আর কেউ রইলো না।’ 

লিমা বলেন, ‘আমার বাবা সারাজীবন সৎ থেকে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ জীবন দিয়ে সেটা আরও একবার প্রমাণ করে গেলেন।’  

এই দুর্ঘটনায় রেলওয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

রেজাউল/বকুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়