ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কুয়েটের ২ হল প্রভোস্টের পদত্যাগপত্র জমা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩২, ৭ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ২২:৩৬, ৭ ডিসেম্বর ২০২১
কুয়েটের ২ হল প্রভোস্টের পদত্যাগপত্র জমা 

প্রফেসর কল্যাণ কুমার ও প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমানহালদার ও

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই শিক্ষক। ইতোমধ্যে উপাচার্যের কাছে তারা তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) কুয়েট জনসংযোগ ও তথ্য শাখার মুখপাত্র মো. রবিউল ইসলাম সোহাগ বলেন, দুই জন প্রভোস্ট ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের আবেদন করেছেন। তবে, কুয়েট কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। 

পদত্যাগ করা প্রভোস্টরা হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার ও ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান।

প্রভোস্টরা পদত্যাগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে প্রভোস্ট সংকটের শঙ্কা করা হচ্ছে। অপর চার হলের প্রভোস্ট ও সাত হলের সহকারী প্রভোস্টরা ৫ দফা দাবি পূরণ না হলে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। কারণ প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর শিক্ষকরা কেউই প্রভোস্টের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ড. সেলিমের মৃত্যুর পর থেকে এই দুইজন প্রভোস্ট মানসিক অস্থিরতা পাশাপাশি জীবনের শঙ্কাও করছেন। হলের পরিবেশও অস্থিতিশীল। তাছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যরাও উদ্বিগ্ন।

কুয়েটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার বলেন, ‘ড. সেলিম আমার বন্ধু ছিলেন। তার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পরের দিনই আমি প্রভোস্ট পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এরপর আরও একজন প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন।’ 

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, কুয়েটের সাতটি হল পরিচালনা নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগ, খেলাধূলা, ফ্লোর মনিটরিং ও ইন্টারনেটসহ আরও কিছু বিষয় থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে সংগঠনের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। এ নিয়ে প্রভোস্টদের মানসিক চাপে রাখা হয়, যার শিকার সেলিম হোসেন।

কুয়েটের রোকেয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর এ বি এম মামুন জামাল বলেন, শিক্ষক সেলিম হোসেনের চলে যাওয়া কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তার মৃত্যুতে সকলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পর প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রভোস্টদের নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে সবাই শিক্ষক সমিতির ৫ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে দুইজন প্রভোস্ট পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা সাত দিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যপক ইসমাঈল সাইফুল্যাহ বলেন, বুধবার (১ ডিসেম্বর) প্রভোস্টদের নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। যা রেজুলেশন আকারে তৈরির প্রস্তুতি চলছে। সভায় দু-একজন প্রভোস্ট পদত্যাগের বিষয় তুললে তাদের জানানো হয়, কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে জমা দিতে। শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

৩০ নভেম্বর কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ড. সেলিমকে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। আনুমানিক আধা ঘণ্টা শিক্ষকের কক্ষে অবস্থান করে তারা। সেখানে কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। পরে শিক্ষক ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাসায় যান। সেখানে দুপুর ২টার দিকে ওয়াশরুমে অচেতন হয়ে মারা যান তিনি।
 

নূরুজ্জামান/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়