ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দেশের জন্য যুদ্ধ শেষে একটি ঘরের আকুতি

পঞ্চগড় সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪১, ৮ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ২০:৪৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২১
দেশের জন্য যুদ্ধ শেষে একটি ঘরের আকুতি

হামিদ আলীর যে দিন গেছে একেবারেই গেছে। এখন আছে শুধু স্মৃতি। সেই সুখস্মৃতি তার জীবনের অনুপ্রেরণা। কিন্তু জীবনের বহু পথ পেরিয়ে এই শেষবেলায় অনুপ্রেরণা বড্ড শুকনো মনে হয়। মনের কোণে বাসা বাঁধা আক্ষেপ ফোঁস করে মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে হামিদ আলী যুদ্ধে গিয়েছিলেন। ফিরে এসেছেন বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে। তারপর? এর পরের গল্পটা সবার জানা। যদিও তা কাম্য ছিল না। হামিদ আলী জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারেননি। এখন বার্ধক্যসহ নানান রোগে ভুগছেন। শেষ বয়সে পাকা ঘরে থাকার ইচ্ছে তার। একটি ঘরের জন্য আকুতি জানিয়েছেন তিনি।

হামিদ আলীর বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নে। অধিকারী পাড়ার মৃত দারাজ আলীর ছেলে তিনি। বাড়িতে পুরনো টিনের ঘর। ফুঁ দিলেই বোধহয় হেলে পড়বে একদিকে। কিন্তু উপায় নেই। সেই ঘরেই দিন কাটে তার। স্ত্রী নিলুফা বেগমও তার সঙ্গে থাকেন না। তিনি বড় ছেলে পিয়ার আলীর সঙ্গে অন্যত্র থাকেন।

হামিদ আলী জানান, তার তিন ছেলে। এর মধ্যে স্ত্রী নিলুফাসহ দুই ছেলেই মানসিক রোগী। তার দেখভাল করেন মেজ ছেলে রুবেল। এ অবস্থায় বেশ বিপাকে পড়েছেন তিনি।

হামিদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা আসে কিন্তু আমার ভাগ্যে তা জোটে না। যাদের আছে তারা পাকা ঘর পায়, আমি পাই না। ঘরের জন্য কয়েকবার নাম নিয়ে গেছে, খাস জমির জন্যও আবেদন করছি- পাই নাই।

বসত বাড়ির অল্প একটু জমি বড় ছেলে পিয়ার আলীর নামে লিখে দিয়েছেন। কারণ অতি-অভাবে তিনি যেন জমি বিক্রি করতে না পারেন। হামিদ আলীর জীবনজুড়ে শুধু না-পাওয়ার গল্প। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিটুকু শুধু উজ্জ্বল। সেই স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, বিয়ের কয়দিন পরেই দেশে যুদ্ধ লাগে। ঘরে নতুন বউ রেখে যুদ্ধে গেছি। বাপ-চাচা, গ্রামবাসীরা না করছে, মানি নাই। দেশ স্বাধীনের পর বাড়ি ফিরে দেখি সব ঠিকই আছে। এমনকি অভাবটাও! মানুষের বাড়ি কাজ করে খাইছি। এখন ভাতা পাই। তা দিয়া তো আর চলে না। চিকিৎসার খরচও দিন দিন বাড়তেছে। বয়স মেলা হইছে; শেষ বয়সে আশা- সরকারি ঘরে ঘুমাব।

ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ কমান্ডের সভাপতি এটিএম আখতারুজ্জামান ডাবলু বলেন, হামিদ চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও অসহায় জীবনযাপন করছেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরি নিয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু হামিদ চাচার সন্তানরা পড়ালেখা করতে পারেনি। আর্থিকভাবেও অস্বচ্ছল তারা। একটি সরকারি ঘর পেলে তাদের জন্য উপকার হতো।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন জানান, হামিদ আলীর সার্বিক খোঁজখবর আমরা নেব।
 

আবু নাঈম/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়