ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মেহেরপুরের অধিকাংশ বধ্যভূমি এখনো অরক্ষিত

মেহেরপুর প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১০, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১১:১৬, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১
মেহেরপুরের অধিকাংশ বধ্যভূমি এখনো অরক্ষিত

মেহেরপুরেরি একটি বধ্যভূমির সামনে দাঁড়ানো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সংরক্ষণ বা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি মেহেরপুর জেলার অধিকাংশ বধ্যভূমি। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে কিছু বধ্যভূমি পরিচর্যা করা হলেও অধিকাংশ বধ্যভূমি চেনার উপায় নেই। এতে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের টর্চার সেল সর্ম্পকে জানতে পারছে না। 

বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করে সেগুলো নাম ফলকের মাধ্যমে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে জানার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। 

মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মাস্টার পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীন করেছেন দেশ। ছাত্র ছিলেন মেহেরপুর সরকারি কলেজের। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রান হারান তার অনেক সহযোদ্ধা।  এই কলেজের পিছনেই একটি বধ্যভূমিতে দাফন করা হয় তাদের। কিন্তু এখন সেই বধ্যভূমিটি চেনার উপায় নেই। এখনো মেহেরপুরের অনেক স্থানে এমন অনেক বধ্যভূমি আছে যেগুলো চিহ্নিত করে নামফলক করে দেওয়া হয়নি। 

মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য মতে, জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৫টি বধ্যভূমি রয়েছে, যার মধ্যে হাতে গোনা ৩ থেকে ৪টি শনাক্ত করা হয়েছে।  বাকিগুলো রয়েছে অযত্ন ও অবহেলায়।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী ইদ্রিস আলী, সিরাজ উদ্দিন, মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মেহেরপুর শহরের কলেজ মোড়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয় চত্বর ও কাজিপুরসহ হাতে গোনা ৩ থেকে ৪টি বধ্যভূমি ছাড়া স্বাধীনতার পর অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা বধ্যভূমিগুলোকে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটসহ কেউই নামফলকও টানাতে পারেনি।

মুক্তিযেদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষন করা না হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে না মুক্তিযোদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী কিভাবে আমাদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন করেছে।’ যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং দেশপ্রম জাগ্রত করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনছুর আলম খাঁন বলেন, ‘এরই মধ্যে কয়েকটি বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকি যেগুলো এখনও সংস্কার করা সম্ভব হয়নি সেগুলো সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর গাংনী উপজেলার দু’টি গণকবরে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের ভাটিপাড়া নীলকুঠির পাশে ৭১ লাখ ১৭ হাজার টাকা ও একই ইউনিয়নের সাহারবাটি টেবুখালির মাঠ গণকবরে ৭০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দুটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ মেহেরপুর।’

মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভু কুমার পাল জানান, ‘এরই মধ্যে গাংনীর ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্কের পাশে ও সাহারবাটি টেবুখালির বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া একই উপজেলার কাজীপুর সীমান্তে ৬ গণকবর, বামন্দী গণকবর, সদর উপজেলার মেহেরপুর সরকারি কলেজ মোড়ে এলাকায় কবরস্থানের পশ্চিম পাশের গণকবর ও মুজিবনগর উপজেলার মাঝপাড়াতে অবস্থিত গণকবরটিকে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়ার পর গণপূর্ত বিভাগ এরই মধ্যে সার্ভে করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।’

গাংনী উপজেলার বামন্দীর গণকবরটির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে ও মুজিবনগর উপজেলার মাঝপাড়ার গণকবরটির সাইট প্ল্যান তৈরি এবং ডিজিটাল সার্ভের হার্ড ও সফট কপি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে মেহেরপুর শহরের কবরস্থানের পাশের বধ্যভূমিতে এরই মধ্যে মেহেরপুর পৌরসভা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে বলেও জানান তিনি।

গাংনী উপজেলার কাজীপুর সীমান্তে ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর এ প্রকল্পের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে জানানো হয়, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট হওয়ায় ওখানে কোনো স্থাপনা করা যাবে না।

মহাসিন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়