ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বীরাঙ্গনা লাইলী ভাবেন- কেন আসে ডিসেম্বর?

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ১৭ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৫:০২, ১৭ ডিসেম্বর ২০২১
বীরাঙ্গনা লাইলী ভাবেন- কেন আসে ডিসেম্বর?

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রায় ৭ মাস পর হঠাৎ একদিন পাকিস্তানি সেনারা হানা দেয় লাইলী বেগমের বাড়িতে। সম্ভ্রম বাঁচাতে তিনি আশ্রয় নেন প্রতিবেশীর বাড়ি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

লাইলী বেগম বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু তাতে সান্ত্বনা কিছুটা মিললেও দূর হয়নি মনের কষ্ট। যে ক্ষতি তাঁর হয়েছে সেই স্মৃতিচিহ্ন আজও তাঁকে তাড়িয়ে বেরায়। মনের চাপা কষ্ট বেড়ে যায় ডিসেম্বর এলে। এ সময় অনেক সাংবাদিক তাঁর বাড়ি আসেন। নানা প্রশ্নে জর্জরিত করেন। ছেলে-মেয়েদের সামনে বারবার কুঁকড়ে যান তিনি। ক্ষোভ জমে ওঠে মনের ঘরে। ভাবেন- কেন আসে এই মাস? পরক্ষণেই যখন মনে পড়ে এই মাস বিজয়ের, তখন কোনো কষ্টই তাঁর কষ্ট মনে হয় না।

১৯৭০ সালে লাইলী বেগমের বিয়ে হয় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। এক বছরের মধ্যেই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে মনোয়ার হোসেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি লাইলী বেগম মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে তিনি স্বামীকে সেদিন ভাগ্যের হাতে সপে দিয়েছিলেন।

ভাগ্য তাঁর সহায় ছিল না। স্বামী যুদ্ধ শেষে ফিরে এলেও ক্ষতির শিকার হন লাইলী বেগম। তিনি জানান, যুদ্ধের বছর সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ। দুপুরবেলা হঠাৎ পাকিস্তানি সেনারা গুলি করতে করতে গ্রামে ঢুকে পড়ে। তারা লাইলী বেগমের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে তাড়া করে। সম্ভ্রম বাঁচাতে তিনি প্রতিবেশী অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল আযমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। হায়নার দল সেখানে হানা দিয়ে তাঁকে ছিনিয়ে নেয়। এক সময় লাইলী বেগম জ্ঞান হারালে পাকসেনারা তাঁকে মৃত ভেবে রেখে যায়। 
চোখ দিয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়া পানি মুছতে মুছতে নিজেকে সামলে নেন লাইলী বেগম। বলেন, অনেক ভেবেছি আত্মহত্যা করার কথা। কিন্তু স্বামীর জন্য মন কেঁদেছে। সে আমাকে অবজ্ঞা, অবহেলা করে নাই। বরং যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে সব শুনে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছে- তোমার তো কোনো দোষ নাই। তুমি মনে কষ্ট নিও না। স্বাধীন দেশে আমরা নতুন করে বাঁচব।

লাইলী বেগম স্বীকৃতি পেলেও তাঁর স্বামী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি 

হ্যাঁ, এখন নতুন জীবন নিয়ে বেঁচে আছেন লাইলী বেগম এবং তার স্বামী মনোয়ার হোসেন। বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেয়া ঘর পেয়েছেন। নিয়মিত ২০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। স্বামী দুই ছেলে, ছেলের বউ আর নাতি-পুতি নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তবে মনোয়ার হোসেন মুক্তিযোদ্ধা হলেও আইনি জটিলতায় তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। আগে ভ্যান চালাতেন। এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাই বলে, ঘরে শুয়ে-বসে থাকার মানুষ তিনি নন। বিনা বেতনে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা অফিসে কাজ করেন তিনি।

মনোয়ার হোসেন  বলেন, বীরাঙ্গনাদের ত্যাগ আমি শ্রদ্ধার চোখে দেখি। আমার স্ত্রী যে ত্যাগ করেছে, তা দেশের জন্য। এ নিয়ে লজ্জার কারণ নেই। তবে মনে কষ্ট একটাই- প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আমি মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেলাম না। 

 
 

শাহীন/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়