ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বন্ধ শেবাচিমের বার্ন ইউনিট, দগ্ধ রোগীরা সার্জারি ইউনিটে

নিজস্ব প্রতিবেক, বরিশাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:৫৯, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১
বন্ধ শেবাচিমের বার্ন ইউনিট, দগ্ধ রোগীরা সার্জারি ইউনিটে

সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো চিকিৎসক না থাকায় প্রায় দুই বছর ধরে তালা বদ্ধ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বার্ন ওয়ার্ডে কোনো রোগী ভর্তি না হলেও পুড়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে সার্জারি ওয়ার্ডে। চিকিৎসক না থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর যেসব রোগীর অবস্থা একটু সংকটাপন্ন তাদের উন্নত চিকিৎসার নামে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঢাকায়।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ৭২ জন রোগীকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বর্তমানে সার্জারি বিভাগে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। পুড়ে যাওয়া এসব রোগীদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন বার্ন ইউনিট। শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সেই ইউনিট এখন বন্ধ রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের নিচতলায় সহকারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে আটটি শয্যা নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের। বছর খানেক পর ডা. হাবিবুর রহমান অবসরে গেলে তার স্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে বদলি হয়ে আসেন সহযোগী অধ্যাপক শাখওয়াত হোসেন। কিন্তু তিনি এখানে যোগদান করেননি। পরে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন ডা. একেএম আজাদ সজল এই ইউনিটটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 

ডা. একেএম আজাদ ১৬ জন নার্স নিয়ে আট শয্যা থেকে বার্ন ইউনিটকে ৩০ শয্যায় র উন্নিত করেন। কিন্তু ২০২০ সালে ২৮ এপ্রিল  ডা. একেএম আজাদ বরিশাল নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকের লিফটে রহস্যজনকভাবে মারা যান। তার মৃত্যুর পর থেকেই শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, কোনো রোগী আগুনে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পুরে গেলে সার্জারি ইউনিটে তার চিকিৎসা সম্ভব। এর অধিক পুড়লে তার জন্য অবশ্যই বার্ন ইউনিট প্রয়োজন। এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে যেসব রোগী এখন পর্যন্ত শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে ৮০ ভাগ রোগীর শরীরের ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এসব রোগীদের চিকিৎসায় বার্ন ইউনিটের প্রয়োজন। কিন্তু শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে।

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজিমুল আহসান বলেন, ‘এই হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে কোনো চিকিৎসক নেই। ওই ইউনিটটি বন্ধ হওয়ার পর থেকেই সার্জারি বিভাগ দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে ওই ইউনিটে চিকিৎসক পদায়ন দিয়ে ইউনিটটি চালু করা প্রয়োজন। ’

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্নিদগ্ধ যেসব রোগী আসছেন তাদের সার্জারি ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর অবস্থা গুরুতর দেখলে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বার্ন ইউনিটিটি চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়ে অন্তত একজন চিকিৎসকের জন্য বারবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কোনো উত্তর আসেনি। তবে বর্তমান সরকার বরিশালে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগ অনুযায়ী কাজও চলছে।’

স্বপন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়