ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কন্যা জন্ম দেয়ায় স্ত্রীকে ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বামী

লালমনিরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ২২:৫৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
কন্যা জন্ম দেয়ায় স্ত্রীকে ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বামী

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে পরপর দুটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় স্ত্রীকে ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে আমিনুর রহমান নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয় প্রথম সন্তানকে হত্যাচেষ্টা, দ্বিতীয় সন্তান গর্ভপাতের উদ্দেশ্যে অত্যাচারসহ যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে আমিনুর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী নয় জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল আদিতমারী উপজেলাধীন কাচারীপাড়ার মৃত আব্দুল বাতেনের মেয়ে লায়লা বিলকিছ বানুর সাথে একই উপজেলার মহিষখোঁচা বারঘড়িয়া গ্রামে আমজাদ হোসেনের ছেলে আমিনুর রহমানের বিয়ে হয়। লায়লা একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আমিনুর একটি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় লায়লার কোলজুড়ে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

লায়লা জানান, কন্যা সন্তান হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে নির্যাতনের পাশাপাশি অবুঝ সন্তানটিকে হত্যার চেষ্টা করেন আমিনুর। এরপর তড়িঘড়ি করে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণে বাধ্য করেন। আট মাস পরে তার পেটে আসে দ্বিতীয় সন্তান। আলট্রাসনো রিপোর্টে যখন জানতে পারেন গর্ভের সন্তানটিও কন্যা। তখনই শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। গর্ভপাতের উদ্দেশ্যে পেটে লাথি মারলে গুরুতর আহত হন। পেটে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় গর্ভের পানি শুকিয়ে যায়। ফলে নির্ধারিত সময়ের ২২ দিন আগে দ্বিতীয় কন্যা সন্তানটির জন্ম হয়। এরপর থেকে লাপাত্তা আমিনুর।

তিনি আরও জানান, বিয়ের পর থেকেই আমিনুর ও তার পরিবার যৌতুকের জন্য নানাভাবে লায়লাকে নির্যাতন করে আসছিল। প্রথম থেকে ছেলে পক্ষের চাহিদা মত যৌতুক দিলেও তাতে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এখন নগদ ১৫ লাখ টাকা, জমি কিনে ফ্লাট নির্মাণ করে নিজ নামে দলিল চান আমিনুর। আর এসবের ইন্ধন যোগাচ্ছেন তার বড় ভাই শহিদুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আমিনুর রহমানের সাথে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার তার কর্মস্থল ও বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আর বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ পরিবারের অন্যান্যরাও।

অমিনুর রহমানের বড়ভাই ও মামলার ২নং আসামি শহিদুল ইসলাম জানান, দায়েরকৃত মামলায় তারা সকলেই জামিনে আছেন। আইনি জটিলতা এড়াতে এরই মধ্যে আদালতের মাধ্যমে দেনমোহরের টাকা জমা দিয়ে লায়লাকে তালাক দেওয়া হয়েছে।

এ ধরনের ঘটনাকে মানসিক দৈন্যতা আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও কঠোর বিচার দাবি করেছেন জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ নেটওয়ার্কের সভাপতি ফেরদৌসি বেগম বিউটি।

তিনি বলেন, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষের সমঅধিকারের নিশ্চিত করতে সরকার যেখানে বদ্ধপরিকর। সেখানে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন একজন যৌতুকলোভী স্বামীর এমন মানসিকতা সমাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দ্রুত অভিযুক্ত আমিনুরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

ফারুক/কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়