ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শোলপুরে বাবাকে হত্যা: মানতেই পারছে না গ্রামবাসী

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৮:৫৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১
শোলপুরে বাবাকে হত্যা: মানতেই পারছে না গ্রামবাসী

গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামি

খুলনার রূপসা উপজেলার শোলপুর গ্রাম। ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত গ্রামটি। গাছ-গাছালিতে ঘেরা। চারদিক ছায়া-শ্যামল পরিবেশ। সুনসান নীরবতা। কিন্তু হঠাৎ করেই এখন সংবাদ শিরোনামে গ্রামটি। শান্ত পরিবেশের এই গ্রামে বাবাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে কিশোর ছেলের বিরুদ্ধে। হত্যার পর লাশ বাড়ির বাথরুমের সেফটিক ট্যাংকিতে লুকিয়ে রাখা হয়। 

দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস পর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রীতিমতো হতভম্ব গ্রামের শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা এই ঘটনা বিশ্বাস করতে পারছে না। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই প্রতিক্রিয়া জানা যায়। 

ভ্যানচালক শেখ এনামুল ওরফে এন্টা হত্যায় তার বড় ভাই শেখ আলাউদ্দিন বাদী হয়ে রূপসা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে রেকর্ড করা হয়। মামলায় নিহতের কিশোর ছেলে মো. তানভীর শেখ (১৯) ও তার সহযোগী প্রতিবেশি জুম্মান শেখকে (৩২) আসামি করা হয়েছে। রাতেই গ্রেপ্তার দুই আসামিকে শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) আদালতের মাধ্যমে খুলনা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন। 

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ এনামুল ওরফে এন্টা যুগিহাটি গ্রামের মৃত শেখ আব্দুল হকের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে কয়েক বছর আগে পাশের শোলপুর গ্রামের টিনের মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। তিনি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের সংসার সুখে-দুঃখে কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু গত প্রায় এক বছর আগে বনিবনা না হওয়ায় পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী তাকে ছেড়ে যশোরের অভয়নগর এলাকার জনৈক আজগারকে বিয়ে করে সংসার পাতেন। পরে ছোট ছেলে ফাহিমকেও নিয়ে যান তার স্ত্রী। এ সব কারণে মানসিকভাবে বিপযস্ত ছিলেন এনামুল। এ কারণে দু’ ছেলে তানভীর শেখ ও নাইম শেখের সঙ্গে তিনি রূঢ় আচরণ করতেন। এছাড়াও প্রতিবেশি জুম্মান শেখের সঙ্গেও জমি নিয়ে বিরোধ ছিল এনামুলের। এসব কারণে বড় ছেলে তানভীর এবং জুম্মান তাকে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা গ্রামবাসীর। 

নিহত এনামুল ওরফে এন্টার প্রতিবেশি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছরের মে মাস থেকে এনামুল নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে তার ছেলেদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে তার বাবা ঢাকায় চলে গেছে। কিন্তু তারা যে নিজ বাবাকে হত্যা এবং লাশ বাথরুমের ট্যাংকিতে লুকিয়ে রাখতে পারে- এটা তারা ন্যূনতম সন্দেহও করেনি। এমনকি তারা ওই লাশ থাকা বাথরুমের মধ্যে মাঝে-মধ্যে কেরোসিন ঢেলে দিত দুর্গন্ধ লুকানোর জন্য। তাতেও বিষয়টি বুঝতে পারেনি তারা। কিন্তু মেঝ ছেলেকে বড় ছেলে মারধর করার কারণে সে ঘটনাটি সবাইকে বলে দেয়। 

অপর প্রতিবেশি লাইলী বেগম বলেন, এতবড় ঘটনা এইটুকু ছেলের পক্ষে করাটা অসম্ভব। এর পিছনে আরও কেউ থাকতে পারে। সঠিক তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তারা। 

দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ছেলে তানভীরকে প্রতিবেশি জুম্মানের সঙ্গে মিশতে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে মানেনি। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবা এনামুল ছেলে তানভীরকে মারধর করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন জুম্মন এবং তানভীর মিলে শিলপাটা দিয়ে তাকে আঘাত করে হত্যা করে। পরে লাশ ঘরের পিছনের বাথরুমের সেফটিক ট্যাংকির স্লাব খুলে তার ভিতরে লুকিয়ে রাখে। 

রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন বলেন, বুধবার (২৯ ডিসম্বর) সকালে বড় ছেলে তানভীর তার ছোট ভাই নাঈমকে (১১) মারধর করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাঈম চিৎকার করে বাবা হত্যার কথা সকলকে জানিয়ে দেয়। এরপর ছোট ছেলে নাঈমের বক্তব্যের জেরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে কংকাল উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান ওসি। 
 

নূরুজ্জামান/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়