ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নদীতে ঝাঁপ দেওয়া ৩০০ যাত্রীকে উদ্ধার করেন মিলন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৭, ৩ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৩:৩৩, ৩ জানুয়ারি ২০২২

ঢাকা থেকে বরগুনাগামি ‘এমভি অভিযান ১০’ লঞ্চে গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে আগুন লাগে। আগুন থেকে নিজেদের জীবন বাঁচাতে সুগন্ধা নদীতে ঝাঁপ দেন কয়েক শ যাত্রী। ওই সব যাত্রীদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জনকে নিজের ট্রলারে উদ্ধার করেন মিলন খান (৩৮) নামের এক ট্রলার চালক। বিনা পয়সায় সে সময় তিনি উদ্ধার হওয়া সেসব যাত্রীদের পৌঁছে দেন ঘাটে। 

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী পারের কলাবাগান এলাকার বেরিবাঁধ সড়কের পাশের একটি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মিলন খান। ট্রলার চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। লঞ্চে আগুন লাগার খবর তিনি ঘরে বসেই জানতে পারেন। তাই জীবন বাঁচাতে মানুষের আত্মচিৎকার শুনে ঘরে বসে থাকতে পারেননি তিনি। রাতেই ট্রলার নিয়ে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। শুধু মিলন খান একাই নয় সে সময় সুগন্ধা নদীর দুই পাড়ের অনেকেই এগিয়ে আসেন দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটির যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে।

সম্প্রতি কথা হয় মিলন খানের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০ বছর ধরে ভাড়ায় ট্রলার চালান তিনি। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। কলাবাগান এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। বড় মেয়ে সানথিয়া আক্তার এবার এসএসসি পাশ করেছে। ছোট মেয়ে মারিয়া আক্তার চতুর্থ শ্রেণিতে ও ছেলে জিসান দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করেছে। মাসের ১৫ দিন ট্রলার চালায় ও বাকি ১৫ দিন বেকার থাকতে হয় তাকে। প্রতিদিন তিনি ৫ টাকার বিনিময়ে যাত্রীদের সুগন্ধা নদীর এপার থেকে ওপার নিয়ে যাওয়া আসা করেন। অভাব অনটনের সংসারে মিলন খানের এমন মানবতা দেখে অবাক সবাই।

মিলন খান বলেন, ’২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীতে যাত্রীদের চিৎকার ও লঞ্চে আগুন দেখতে পেয়ে ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আগুন থেকে বাঁচতে যাত্রীরা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ভেসে আছেন। তাদের অধিকাংশই দগ্ধ অবস্থায় ছিলেন। অনেকের হাত ও পা ভাঙা অবস্থায় ছিল। ঘাটে আনা এসব যাত্রীদের আশ্রয়ের ও গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করেন এলাকাবাসী। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘নদী থেকে যে কয়জন যাত্রীকে উদ্ধার করেছি তাদের কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি। টাকাই সব নয়। বিপদে মানুষের সহায়তা করেছি এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।’

অলোক/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়