ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দুই দপ্তরের ‘রশি টানাটানির’ বলি হাজারো মানুষ

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ৮ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ২১:৩০, ৮ জানুয়ারি ২০২২
দুই দপ্তরের ‘রশি টানাটানির’ বলি হাজারো মানুষ

দুই দপ্তরের রশি টানাটানিতে ভেঙে যাওয়ার ৩ বছর পরও সেতু নির্মাণ হয়নি। এতে করে মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলার হাজারো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্নাসীরচর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের গোবিন্দ মাদবরেরকান্দি গ্রামে একটি কালভার্ট সেতু ছিল। সেতুটি ১৯৯৫ সালের শুরুর দিকে এলজিইডির রাস্তা তৈরির সময়ে নির্মাণ হয়। সন্নাসীরচর ইউনিয়ন ও পাশের ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ও চরনাসিরপুর, সদরপুর এবং শিবচরের বন্দরখোলা ও সন্নাসীরচর ইউনিয়নের প্রায় পনের হাজার মানুষ এই কালভার্ট সেতু পার হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে।

কিন্তু ২০১৮ সালের বন্যায় রাস্তাটির কিছু অংশসহ কালভার্ট সেতুটি ভেঙে যায়। এরপর থেকে এলাকাবাসী একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার হয়ে আসছিল। গত ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় ইউপি নির্বাচনের জন্য বাঁশের ওপরে কাঠের তক্তার মাচা বসিয়ে দেয়া হয়। এতেও শিবচরের পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ড থেকে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার শিমুলতলী পর্যন্ত ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চালিয়ে পার হওয়া যায় না। ফলে এই অঞ্চলের দুই জেলার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ গত ৩ বছর ধরে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। 

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরনাসিরপুর ইউনিয়ন থেকে আসা হালিম হাওলাদার বলেন, ‘আমরা ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার মানুষ হলেও সহজে যাতায়াত করার জন্য শিবচরের পাঁচ্চর হয়ে ঢাকা যাই। কিন্তু গত ৩ বছর ধরে গোবিন্দমাদবরের কান্দি গ্রামের সেতুটি ভেঙে আছে। তাই সরাসরি গাড়িতে চলাচল করতে পারি না। এতে অনেক সমস্যায় পড়ি।’

ফরিদপুরের সদরপুরের বাসিন্দা ইউনুস বেপারী বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে পাঁচ্চর নেমে সন্নাসীরচর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে সদরপুরে যাচ্ছি। কিন্তু গত তিন বছর ধরে গোবিন্দ মাদবরেরকান্দি গ্রামের ছোট্ট সেতুটি না থাকায় মালামাল নিয়ে পাড় হতে কষ্ট হয়। এখানে সেতুটি নির্মাণ হলে আমাদের সকলের জন্য ভাল হতো।’ 

ফরিদপুরের চরমানাইর ইউনিয়নের শিমুলতলী গ্রাম থেকে আসা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘এই রাস্তাটি দিয়ে আমরা দুই জেলার মানুষ চলাচল করি। কিন্তু এখানে ব্রিজটি তিন বছর ধরেই ভেঙে গেছে। সরকার ব্রিজটি নির্মাণ করে দিলে আমাদের অনেক উপকার হয়।’

একই কথা বললেন এই গ্রামের বাসিন্দা জালাল বেপারী। বলেন, ‘প্রায় ৩ বছর হয়ে গেল সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে না। এতে অনেকের যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। গত ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন উপলক্ষে মেরামত করে এখন কাঠের তক্তা বিছাইয়া দিছে। যাতে অফিসাররা আসতে পারে। কিন্তু আমাগো কথা চিন্তা করে ঠিক করেনি। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, দ্রুত সেতুটি এখানে নির্মাণ করে দেওয়া হোক।’

সন্নাসীর চর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি মেম্বার ফজলুল হক বলেন, ‘আমি আমার এলাকার এই কালভার্টটি নির্মাণ করার জন্য উপজেলা এলজিইডি অফিসে কয়েকবার গিয়েছি। আবার পিআইও অফিসেও খোঁজখবর নিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। দুই বছর হয়ে গেলেও সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে না। এই সেতুটি দুইটি জেলার মানুষের যাতায়াতের একটি মাধ্যম। আমি দাবি করছি, দ্রুত সেতুটি যেন নির্মাণ করে দেওয়া হয়।’

এদিকে শিবচর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘রাস্তাটি আমাদের হলেও কালভার্ট সেতুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টি তারা ভালো বলতে পারবে।’

এই বিষয়ে শিবচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, ‘ওই এলাকার রাস্তাটি উপজেলা এলজিইডি নির্মাণ করে। তাই ওই ব্রিজটিও তাদেরই করার কথা। তবে, যদি উপজেলা এলজিইডি সেতুটি নির্মাণ না করে তাহলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখবে। যদি সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়, তাহলে করা হবে।’

/এনএইচ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়