ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পাবনার হাসপাতালে রোগীর চাপ, বারান্দায় রেখেও চলছে চিকিৎসা

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ১৯ জানুয়ারি ২০২২  
পাবনার হাসপাতালে রোগীর চাপ, বারান্দায় রেখেও চলছে চিকিৎসা

উত্তরের জেলা পাবনায় শীতের প্রকোপ বাড়ছে। গত কয়েক দিন ধরে জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত নানা রোগ। ফলে প্রতিদিন শিশু ও বৃদ্ধসহ অর্ধশতাধিক মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। শয্যা না পেয়ে অনেক রোগী হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালে। ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী আসায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের। রোগীরা এক সপ্তাহ যাবত হাসাপাতালে ভর্তি হলেও তাদের জন্য শয্যা বরাদ্ধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। জরুরী বিভাগেও রোগীর বাড়তি চাপ দেখা গেছে। শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ছোট্ট তিনটি কক্ষে মানুষ গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। কারো মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর শীতের মৌসুম শুরু হলে জেলায় অল্প সংখ্যক শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকায় শীতে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে ৩৬টি শয্যা থাকলেও এখানে রোগী ভর্তি রয়েছে ৯৩ জন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৬টি শয্যার বিপরীতে ৭০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়া অনেকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় অবস্থান করছেন। জরুরী বিভাগেও প্রতিদিন অন্তত শতাধিক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ‘পাবনা জেনারেল হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২৫০টি। এর মধ্যে কোভিড রোগীদের জন্য ১০০ শয্যা সংরক্ষিত করে রাখার পর বাকি রয়েছে ১৫০টি শয্যা। কিন্তু এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন। শিশু ওয়ার্ডের ১৫ জন নার্স ও পাঁচজন চিকিৎসক দুই শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাবনা পৌর সদরের নয়নামতি এলাকার শিশু রায়হান আলীর মা রুমি আক্তার বলেন, ‘৬ দিন আগে শিশুর ঠান্ডা-জর দেখা দেয়। গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও জর কমেনি। হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডায়রিয়াও দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা করে নিউমোনিয়া শনাক্ত হয়েছে। এখন চিকিৎসা চলছে।’

ঈশ্বরদী উপজেলার রুপপুর থেকে আসা শিশু রায়ানের মা সীমা খাতুন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হলেও এখনো শয্যা পাইনি। বাধ্য হয়েই হাসপাতালের বারান্দায় অবস্থান করছি। রাত হলেই প্রচল্ড শীত আমাদের কাবু করে ফেলে। ফলে শিশুর ঠান্ডা কমছে না। এরসাথে মশার যন্ত্রণাতো আছেই।’ 

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. কে এম আবু জাফর বলেন, ‘হাসপাতালের কোনো ওয়ার্ডেই নির্ধারিত শয্যা অনুযায়ী রোগী ভর্তি বা চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি এ সীমিত ব্যবস্থার মধ্যে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। হাসপাতালে বর্তমান চিকিৎসকের জন্য ২০টি শুণ্য পদ রয়েছে। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’

পাবনার সিভিল সার্জন মনিসর চৌধুরী বলেন, ‘শীতজনিত রোগ বাড়লেও চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আতঙ্কিত হওয়ার মতো এখনো কিছু হয়নি। পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। করোনাকাল হওয়ায় আমরা রোগীসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছি। যথেষ্ট জনবল ও চিকিৎসা সামগ্রী মজুদ রয়েছে।’

শাহীন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়