ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিক্রি হওয়া ২শ অস্ত্রের হদিস নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২০ জানুয়ারি ২০২২  
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিক্রি হওয়া ২শ অস্ত্রের হদিস নেই

অস্ত্র কারবারি আকুল হোসাইনসহ চার সহযোগী (ফাইল ফটো)

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিক্রি হওয়া ২শ অস্ত্রের খোঁজ মেলেনি কয়েক মাসেও। যশোর ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে এনে এ অঞ্চলের আন্ডার ওয়ার্ল্ডে এই অস্ত্রগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এসব অস্ত্র এখন সন্ত্রাসীদের হাতে হাতে ঘুরছে।

শার্শার বহুল আলোচিত অস্ত্র ব্যবসায়ী আকুল হোসাইন চক্র এসব অস্ত্রের বিক্রেতা। ক্রেতার তালিকায় রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, জঙ্গি, পেশাদার কিলারসহ নানা অপরাধী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত বছরের ১ আগস্ট দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আলোচিত অস্ত্র বেচাকেনার হোতা বেনাপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড আকুল হোসাইন ৮টি নাইন এমএমসহ ঢাকা ডিবি পুলিশের হাতে আটক হন। এসময় তার আরো চার সহযোগী ইলিয়াস হোসেন, আব্দুল আজিম, ফারুক হোসেন এবং ফজলু রহমানও আটক হন। চক্রটি তক্ষক সাপ প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, গোল্ড স্মাগলিং, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা, আইস, মাদক চোরাচালানের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলেও জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। 

জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে তথ্য মেলে, অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের প্রধান আকুল হোসাইন ২০১৪ সাল থেকে দুই শতাধিক অস্ত্র নিজে বিক্রি করেছেন। চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের ও ব্রান্ডের অস্ত্র সরবরাহ করেছেন। যশোরের অনেক ছিনতাইকারী, খুনী রাজনৈতিক চক্র ও ভাড়াখাটা একাধিক সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গেও সখ্যতা রয়েছে আকুলের। আটককৃতদের দেওয়া তথ্যে মাঠে নামে গোয়েন্দা শাখা। এ ব্যাপারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কাজ শুরু হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মহামারি করোনার প্রকোপ ও কঠোর নজরদারির মধ্যেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অবৈধ অস্ত্র কারবারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিগত কয়েক বছরে সীমান্ত এলাকা দিয়ে খুবই কৌশলে আন্ডার ওয়ার্ল্ডে এই অস্ত্রগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্পটে অপরাধীদের হাতেও দেওয়া হয়েছে। 

সূত্রের দাবি অনুযায়ী, বিগত কয়েকটি নির্বাচনের আগে এবং সর্বশেষ ইউপির ৫ম ধাপের নির্বাচনের আগে পুলিশ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের নতুন একটি তালিকা তৈরি করে। আর তা যাচাই বাছাই করে আটক অভিযান চলে। বিগত দু’মাসে তিন ডজন অস্ত্রও উদ্ধার করে যশোর জেলা পুলিশ। এছাড়া চিহ্নিত ২০ জন দাগী অপরাধীকে আটক করেছে, যাদের দখলে অস্ত্র ছিল। 

অস্ত্র ব্যবসায়ী আকুলসহ ৫ জন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ওই সময় জানায়, অপরাধীরা স্পেন ও জার্মানির তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে। ওই অস্ত্র ওজনে হালকা, গুলি করার সময় শব্দ ও ঝাঁকুনি কম এবং সহজেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। 

গোয়েন্দাদের একটি সূত্র মতে, ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অন্তত শতাধিক অস্ত্র বিক্রি করেছে বলেও জানিয়েছে। অস্ত্র কেনার তালিকায় ছিল যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ইউপি নির্বাচনে সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থীর নামও। ঢাকা কেন্দ্রিকও তারা কিছু অস্ত্র বিক্রি করেছে বলে তদন্তে ওঠে এসেছে। ঢাকায় বিক্রি হওয়া অস্ত্রগুলো ডাকাতি ও চাঁদাবাজিতে ব্যবহার হচ্ছে। তবে এলাকাভিত্তিক বিক্রি হওয়া অস্ত্রগুলো ইউপি নির্বাচনের প্রার্থীরা তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য সংগ্রহ করেছেন বলে তদন্তে উঠে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ওইসব ক্রেতার ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। তবে কাঙ্খিত উদ্ধার ও আটক হয়নি। বিশেষ করে আকুল চক্রের ২শ অস্ত্রের কোনো খোঁজ মেলেনি।

এদিকে, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আটক ও অস্ত্র উদ্ধারে যশোর জেলা পুলিশ জোরালো ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে জিরো টলারেন্স ভূমিকায় রয়েছে পুলিশ। বিগত নির্বাচনের আগে ও পরে কঠোর অবস্থানে থেকে অনেক অঘটন রুখে দিয়েছে পুলিশ। 

বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসছে: পুলিশ

রিটন/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়