ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দিনাজপুরে হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২১ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৫:২১, ২১ জানুয়ারি ২০২২
দিনাজপুরে হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে সৃষ্ট তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের জনজীবন।  বিশেষ করে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো। অন্যদিকে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সকালে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলাতেই তীব্র শীতের তথ্য মেলে। বলা যায়, পুরো জেলার মানুষই শীতে কাঁপছে। কনকনে ঠাণ্ডায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না কেউ। গ্রাম-গঞ্জসহ শহরেও অনেকে আগুন জ্বালিয়ে শীতকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছেন। গোটা শরীর গরম কাপড়ে ঢেকেও যেন শীত ঠেকানো যাচ্ছে না। ভোর রাত থেকে বেলা বাড়া পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে সকল যানবাহন। প্রকট শীতের কারণে এসব বাসে যাত্রী সংখ্যাও কম। 

রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরা কনকনে ঠাণ্ডায় বেশি বিপাকে পড়েছে। ঠাণ্ডা বাতাসে ফাঁকা রাস্তায় হাত গুটিয়ে গাড়িতে বসে আছে এসব চালক, অনেকেই গাড়ির হ্যান্ডেল ধরে কাঁপছে। আবার ঠাণ্ডা বাতাসে কাজের খোঁজে ঘুরছে দিনমজুরেরা।

প্রতিদিন সকালে হিলি বাজারে বসে দিনমজুরের বেচাকেনা। শহরের লোকজন তাদের বাসাবাড়িতে কাজের জন্য এই বাজার থেকে দরকষাকষি করে দিনমজুরদের নিয়ে যায়। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪ থেকে ৫ টা পর্যন্ত এতে কাজের মজুরি পায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। দেখা যায়, তীব্র শীতের প্রভাবে এসব খেটে খাওয়া দিনমজুর কোন কাজ পাচ্ছেন না। অসহায় মানুষগুলো ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে বসে আছেন, যদি কেউ কাজে নিয়ে যায় সেই অপেক্ষায়।

হিলি বাজারে কাজের সন্ধানে দিনমজুর আয়জার আলী শীতের লম্বা সুয়েটার আর মাফলার পড়ে খালি চোখ দুটো বের করে বসে আছেন। তিনি বলেন, সকাল ৭ টা থেকে বসে আছি, এখন পর্যন্ত কেউ কাজে ডাকছে না। শীতের জন্য কয়েক দিন থেকে কাজ-কাম একটু কমই পাচ্ছি। কাজ না পেলে চলবো কি করে?

হিলির চারমাথা মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক আজিবুর হোসেন বলেন, ক'দিন থেকে খুবি শীত পড়ছে, আর ঠাণ্ডা বাতাসে বাহিরে গাড়ি চলাতে পারছি না। কিন্তু কি করবো পেটের ক্ষুধা তো আর শীতের দাপট মানে না। বাড়িতে ছেলে-মেয়েরা আছে, একদিন রিকশা না বের করলে সংসার চলে না। সংসারের চাহিদা মেটাতে শীতে কাঁপলেও গাড়ি বের করেছি।

সকালে কথা হয় একজন ঢাকাগামী কোচ চালকের সাথে, তিনি বলেন, দিনাজপুরে অনেক শীত আর কুয়াশা, কুয়াশায় গাড়ি চালানো বিপজ্জনক। গরম কাপড় পরেও ঠাণ্ডা ঠেক মানছে না।

হিলি থেকে দিনাজপুরগামী বাসচালক মোহম্মদ আলী বলেন, দুই থেকে তিন দিন যাবৎ সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সারাদিন তো দিনাজপুর জেলার মধ্যে থাকতে হয়, সব জয়গায় একই রকম ঠাণ্ডা বাতাস। বাতাসই বেশি কাবু করছে। হাত-পা বরফ হয়ে আছে গাড়ি চলাতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।

হিলি বাজারে সবজি দোকানদার সোহেল রানা বলেন, শীতে তো কাঁপছি, আবার সবজিতে পানি দিতে হয়। পানি তো আরও ঠাণ্ডা। ঠাণ্ডায় জীবন শেষ, দুইদিন থেকে সুর্যের মুখও দেখা যায়নি।

দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তোফাজ্জাল হোসেন জানান, দিনাজপুরে আজ (শুক্রবার) সকাল ৬ টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আদ্রতা ৯৬ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪-৫ কিলোমিটার। 

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ আলম বলেন, শীতের তীব্রতা বর্তমান অনেক বেশি। আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে অসহায় শীতার্তদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানা, স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। এযাবৎ প্রায় ১৫০০ কম্বল বিতরণ করেছি। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

মোসলেম/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়